বাংলার বর্ষায়
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী
ধরাকে দেখে খরার
দহনে কাতর,
নভোলোকে কাঁদে যেন
মেঘের অন্তর।
কৃষ্ণরূপ ধরে তাই
আকাশের বুকে,
আবরণ টেনে দেয়
অরূণের মুখে।
গুরু গুরু রবে ক্ষোভে
বাজায় মৃদঙ্গ,
সাথে রাখে বিজলির
বিদ্রোহী রঙ্গ।
বলাকারা পেয়ে যেন
কিসের খবর,
কৃষ্ণমেঘ ঘেঁষে করে
নিখুঁজ সফর।
চপল নাচে আর
গানে নামে বর্ষণ,
দেখলে তা' মনে হয়
পরীর নাচন।
মৃতধরা পায় এতে
নবরাঙা প্রাণ,
প্রকৃতির রূপ হয়
অতি মহীয়ান।
জেগে ওঠে তরূ-লতা
মহাউৎসবে,
পরিয়ে নতুন সাজ
হরিৎ পল্লবে।
খালে-বিলে থাকে শুধু
জল আর জল,
ঘেঙর ধ্বনিতে জাগে
কোলাদের দল।
ময়ূর পেখম মেলে
তুলে ধরে তান,
ময়ূরীর প্রতি মারে
মিতালীর টান।
পানিবন্দি থাকা সব
নীচু এলাকায়,
পারাপার চলে শুধু
ডিঙ্গি ও ভেলায়।
কেতকি, কুমুদ, কেয়া,
কদম, টগর,
ফুটে বঙ্গের প্রকৃতি
রাখে মনোহর।
সুবাসে গন্ধরাজ ও
হাস্নাহেনা ফুল,
নিশিতে করে সবার
হৃদয় ব্যাকুল।
নানাজাত ফুল আরো
ফুটে বনে বিলে,
শাপলার রূপ জাগে
দীঘি আর ঝিলে।
আউশ তোলে গোলায়
বাংলার চাষী,
আমন রোপনে তার
মুখে ফুটে হাসি।
বর্ষার পানিতে থাকা
নানাজাত মীন,
গ্রামের লোকেরা
ধরে রাত আর দিন।
আমড়া, গাব, পেয়ারা,
আনারসসহ,
বিচিত্র ফলের থাকে
বঙ্গে সমারোহ।
ঝিঁঙে, পটল, বেগুন
বরবটি, কলমি,
বর্ষায় বেশি ফলায়
বাংলার জমি।
বৃষ্টিপাত ভারী হলে
ঘটায় প্লাবন,
মানুষ যাপন করে
দু:সহ জীবন।
পর্ণকুটির এবং
চাষীর ফসল,
তলিয়ে যায় বন্যার
পানিতে সকল।
সাপ-বিচ্ছুর কামড়
আর বজ্রপাতে
মাঝে মাঝে মরে লোক
দিবসে ও রাতে।
পোষা পশু-পাখি পায়
দুঃসহ দুর্ভোগ,
গ্রামে গ্রামে দেখা দেয়
মহামারী রোগ।
উনুনে ওঠে পানি
জ্বলে না আগুন,
রান্নায় নারীর কষ্ট
বাড়ে বহু গুন।
চারিদিকে থাকে যেন
কিসের অভাব,
জাগে যেন সব মনে
বেদনার ভাব।
অতিবৃষ্টি ঘরমুখী
রাখে লোকজন,
বাইরে কাজের সাড়া
মেলে না তখন।
কেউ ঘরে দেখে টি ভি
কেউ গায় গান,
অভাবে গরীব লোক
থাকে পরিম্লান।
অবসরে ঘরে বসে
মেয়েরা বর্ষায়,
মনোলোভা ফুল বোনে
নকশি কাঁথায়।
শিশুরা ঘরের মেঝে
করে থাকেখেলা,
বৃষ্টিতে ভেজে তারা
মজা করে মেলা।
বসে বসে ভাবে কেউ
প্রিয় দের কথা,
বর্ষায় নিঃসঙ্গে শুধু
বাড়ে ব্যাকুলতা।
কবিরা কবিতা লেখে
মনের উচ্ছাসে,
ভাবের প্লবে তাদের
মনে যেন ভাসে।
রূপের বাহার আর
দুঃসহ বেদন,
নিয়ে আসে বাংলায়
বর্ষার রোদন।
অবিরাম কান্না তার
থামাবার তরে,
পুবাকাশে বজ্রনাদে
আলো নৃত্য করে।
থেমে যায় ওই নাদে
বর্ষার কাঁদন,
নামে এতে বাংলায়
ধনের প্লাবন।
.....
No comments:
Post a Comment