তারিখঃ
মাননীয়
সভাপতি,
এডহক কমিটি,
রেলওয়ে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
বিষয়ঃ বিধিমালা বহির্ভূত সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার ও বরখাস্ত কালীন এক বৎসরের বন্ধ রাখা বেতন প্রদানসহ স্বীয় পদে পুনর্বহালের আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এ যে, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী বিগত ০১-০৮-২০০৪ ইং তারিখ থেকে অত্র বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধানশিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ যে, গত ০১-০৬-২০১৬ ইং, তারিখে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক জনাব শাখাওয়াত হোসেন তালুকদার আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে এতৎসঙ্গেযুক্ত সাময়িক বরখাস্ত পত্রটি প্রদান করেন। অত্র সাময়িক বরখাস্ত পত্রে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনীত হয় সেগুলো আপনার জ্ঞাতার্থে নিম্নে তুলে ধরলাম:-
১। আমি নাকি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সম্পূর্ণ অনাগ্রহী এবং শ্রেণিকক্ষে ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলে সময় কাটাই।
২। আমি নাকি ৩০-০৫-২০১৬ ইং, তারিখে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদেরকে ভয়ভীদতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করেছি।
৩। আমি নাকি শ্রেণিকক্ষে মেবাইলে কথা বলি।
৪। আমি নাকি সরকার বিরোধী কথা বলি এবং সরকারের সমালোচনা করি।
৫। আমি নাকি বিভিন্ন মিথ্যাকথা বলে উসকানি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে এমনকি সরকারের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করি।
৬। আমি নাকি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবাধ্য থাকি এবং পেশাগত অসদাচরণ করি।
আমার বিরুদ্ধে আনীত এ সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ভািত্তিহীন। এগুলোর সাথে আমি আদৌ সম্পৃক্ত নই। আমাকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো প্রকার সতর্কীকরণ নেটিশ বা কারণ দর্শানো নোটিশসহ আত্মপক্ষ সমর্থনেরও কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এ সমস্ত অভিযোগের ব্যাপারে ৩/৫ সদস্য বিশিষ্ট কোন তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের কোন সভায় এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে বলেও মনে হয় না। কারণ সাময়িক বরখাস্ত পত্রের সাথে কমিটির রেজুলেশানের কোন কপিও দেয়া হয়নি। অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ায় আমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে তা সাময়িক বরখাস্ত বিধিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আমাকে সাময়িক বরখাস্ত পত্রটি দেয়ার পূর্বে আমার অবর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সভাপতি জনাব নুরুল আবছার এবং প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক জনাব শাখাওয়াত হোসেন তালুকদার নবম ও দশম শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্রকে হাত করে আমার বিরুদ্ধে কয়েকটি দরখাস্ত লিখিয়ে নেন। বিষয়টি আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জানার পর বিগত ৩০- ০৫- ২০১৬ ইং, তারিখে নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা আমার কাছে এর সত্যতা স্বীকার করে এবং আমার বিরুদ্ধে প্রধানশিক্ষকের নিকট ওসব দরখাস্ত দিতে প্রধানশিক্ষক তাদেরকে বাধ্য করেছেন বলেও তারা আমাকে জানায়। ওই সূত্র ধরে এর পরবর্তিতে অর্থাৎ ০১ -০৬ -২০১৬ ইং, দারিখে প্রধানশিক্ষক এতৎসঙ্গে যুক্ত সাময়িক বরখাস্ত পত্রটি আমাকে প্রদান করেন।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকা অবস্থায় বিধি মোতাবেক যে সব আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা, তাও আজ ১ বৎসর যাবত আমাকে দেয়া হচ্ছে না। অথচ আমাকে দেয়া সাময়িক বরখাস্থ পত্রে উল্লেখ আছে যে, আমাকে বিধি মোতাবেক আর্থিক সুবিধাসমূহ প্রদান করা হবে। সাময়িক বরখাস্ত চলাকালীন আর্থিক সুুবিধা বলতে বুঝায় প্রাপ্ত বেতনের অর্ধেক পরিমাণ টাকার অংক। প্রথম দু'মাস আমি এ সুবিধা চাইতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে কোনো আর্থিক সুবিধা দেবেন না বলে দাম্ভিকতার সাথে জানিয়ে দেন। এটিও চাকুরীর নীতিমালা বহির্ভূত একটি মারাত্মক অপরাধ যা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘনেরর সামিল। এ কারণে বিগত এক বছর ধরে আমার মানবেতর জীবন কাটছে। শুধু তাই নয়, আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করার আগের মাসের বেতনও তারা আমাকে প্রদান করেননি। ওই মাসসহ আমি বিদ্যালয়ের কাছে ১ বৎসরের বেতনের টাকা প্রাপ্য আছি।
আমি এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ, জেলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও অবিহিত করেছি। তবে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টির সাথে কমিটির সম্পৃক্ততা রয়েছে বিধায় এতদিন এর কোনো সুরাহা হয়নি। কারণ, আমাকে বরখাস্ত করার কয়েক দিন পর একটি মামলায় অত্র বিদ্যালয়ের কমিটি বাতিল ঘোষিত হয়। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্যে আমাকে পরবর্তী কমিটি' গঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়।
অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক জনাব শাখাওয়াত তালুকদার হচ্ছেন একজন বিদ্বেষপরায়ন ও দুর্নীতিবাজ লোক। তিনি প্রাক্তন সভাপতি জনাব নুরুল আবছার সাহেবকে হাত করে বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে গেছেন। তাঁর দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে
আমি প্রতিবাদীকণ্ঠ ছিলাম বিধায় তাঁর চাকুরীর
মেয়াদ শেষের কয়েক দিন পূ্র্বে সভাপতির মাধ্যমে আমাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন, এবং পরে সম্পূর্ণরূপে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার উদ্দেশ্যে তাঁর গায়ের ঝাল মেটাতে চেয়েছিলেন। আমাকে অপসারণের জন্যে তাদের এ ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিনের। বিগত তিন বছর ধরে তারা আমার অফিস তালাবদ্ধ রেখেছেন। আমার অবর্তমানে আমার অফিসের পদবী ফলক ফেলে দিয়েছেন। আমার ব্যক্তিগত বই-পুস্তক লুটপাট করে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে আমি প্রাক্তন সভাপতিকে বার বার অবিহিত করেও কোন অনুকূল সাড়া পাইনি।
আমি বিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত শিক্ষক। বিগত ১৩ বৎসরে অত্র বিদ্যালয়ে আমার সি, এল ছুটি সর্বমোট দু'মাসের চেয়েও কম হবে। অথচ একজন শিক্ষকের সি, এল, ছুটি বৎসরে ২০ দিন।
আমি বিদ্যালয়ে একাডেমিক তদারকি ও পাঠদানসহ শিক্ষার উন্নয়নমূলক যবতীয় কাজে অত্যন্ত আন্তরিক থাকি। আমার পাঠদানকৃত ইংরেজি বিষয়ে প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ A এবং A+ পেয়ে থাকে। এ বিদ্যালয়ের বিগত সনগুলোর
এস, এস, সি, পরীক্ষার টেবুলেশন সীটগুলো এর সাক্ষ্য বহন করবে।
আমি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী প্রাইভেট পড়াই না এবং আমার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কারো কাছে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজনও বোধ করে না।
আমি একজন অরাজনৈতিক শিক্ষক। কোন রাজনীতি, সরকার, রাষ্ট্র ও নিয়ম শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজে আমি জড়িত নই বলে হলফ করে বলতে পারি। এসব কাজে জড়িত আছি বা ছিলাম এমন কোনো প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবক নিয়ে আমি কখনো দলাদলি করি না এবং এ জাতীয় কাজে জড়িত থাকার প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না।
আমি একজন সহকারী প্রধানশিক্ষক হিসেবে একাডেমিক দায়িত্ব পালনসহ সপ্তাহে ১৮টি ক্লাস নিয়ে থাকি। এছাড়া কোন কারণে শিক্ষক স্বল্পতা দেখা দিলে অতিরিক্ত ক্লাসও নিয়ে থাকি। বিধান মতে একজন সহকারী প্রধান ও প্রধানশিক্ষকের
যৌধ ক্লাস সপ্তাহে মোট ২৪টি। অথচ প্রধান শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে কোন শ্রেণিতে পাঠদান করতেন না। বিগত আট বছরে কোন শ্রেণিতে কোন বিষয়ে মাত্র একটি ক্লাস নিয়েছে এমন প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না।
বিগত ১৩ বছর ধরে আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা
ও সকল সহকর্মীর সহযোগিতায় একাডেমিক দিক দিয়ে বিদ্যালয়কে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি।
অতএব, মহোদয়, বিধিমালা বহির্ভূত এ সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারসহ বিগত এক বৎসরের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করে আমাকে আমার পদে পূণর্বহাল করার জন্যে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নিবেদক-
আপনার একান্ত বিশ্বস্ত,
কলিম উদ্দীন,
ক, উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।