Sunday, September 27, 2020

পবিত্র কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

মূলঃ মাহমুদ মাহদী ইস্তাম্বুল

অনুবাদকঃ মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী

              অনুবাদকের কথা 

পরম করুণাময় মহান আল্লাহ্ পাকের অপার কৃপায় আমি " THE HOLY QURAN AND MODERN SCIENCE" বইটির অনুবাদ সমাপ্ত করেছি। এর মূল লেখক হলেন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাহমুদ মাহদি ইস্তাম্বুলী। এর  ইংরেজি অনুবাদ করেন এম. এদেল. এল ক্যালকেলি (M. ADEL EL-KALKILI)। আমি তার ইংরেজি অনুবাদ থেকে বইটির বঙ্গানুবাদ করেছি এবং এর নাম দিয়েছি "পবিত্র কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান।"

এম. এডেল এল ক্যালকেলি কর্তৃক ইংরেজি অনুদিত  বইটি আমি আমার এলাকার এক প্রবাসী বন্ধু থেকে প্রাপ্ত হই। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ইউনাইটেড আরব আমিরাতে চাকুরি করতেন। একবার তিনি প্রবাস থেকে দেশে আসার সময় বেশ কয়েকটি ইসলামি বই আনয়ন করেন। তন্মধ্যে এ বইও ছিল। তাঁর থেকে বইটি প্রাপ্ত হয়ে আমি এটি আদ্যোপান্ত মনোযোগসহকারে পাঠ করি। 'পবিত্র কোরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা' হলো বইটির আলোচ্য বিষয়, যা পাঠ করে আমি বিমোহিত হই। এজন্যে বইটির অনুবাদ করতে আমি প্রাণিত হই যাতে বাংলা ভাষাভাষী আধুনিক লোকজন এটি পড়ে উপকৃত হয়ে পবিত্র কোরআনের প্রতি তাদের আস্তা ও সম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়।

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন হলো আল্লাহর বাণী, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। এ কিতাব মানুষের হেদায়াতের জন্যে আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ ( স.) এর উপর নাযিল করেন। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, পরিপূর্ণ জীবন বিধানও বটে।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ যে, এক শ্রেণির মানুষ জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কিংবা না বুঝে আল-কোরআন সম্পর্কে নানা প্রকার বাজে মন্তব্য করে থাকে। সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেকার অজ্ঞ যুগের এ গ্রন্থ বর্তমান বিজ্ঞান সভ্যতার যুগে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে না বলে নাস্তিকেরা বড় গলায় প্রচার করে বেড়ায়। আবার অনেক পাপিষ্ঠ লোক  বলে থাকে, পবিত্র কোরআন নাকি মুহাম্মদ (স.) এর নিজের কথা। তারা আরও বলে, মুহাম্মদ (স.) ছিলেন অজ্ঞ যুগের একজন নিরক্ষর নবী। সুতরাং, তাঁর গ্রন্থ বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কোনো কাজে আসবে না, নাউযুবিল্লাহ্। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের নাস্তিক্যবাদীরা এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বেশি করে থাকে। পবিত্র কোরআনের বাণী যে কত উঁচু মানের এবং মানব জীবনের সকল সমস্যা সমাধানের জন্যে এ গ্রন্থ যে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা তারা জানে না। তারা আরো জানে না যে, বিজ্ঞানের যুগ যতই আধুনিক হবে, পবিত্র কোরআনের বাণী তার চেয়ে আরো বেশি আধুনিক হবে এবং এর গুরুত্বও উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে। এটি শুধু মুসলমানদের কথা নয়, যেসব অমুসলিম জ্ঞানীগুণী নিরপেক্ষভাবে এ গ্রন্থ অধ্যয়ন  করেছেন তাঁদেরও কথা। তাঁরা এটি অধ্যায়ন করে জানতে পেরেছেন যে, এটি এমন এক গ্রন্থ যেটিতে রয়েছ মানবজীবনের সকল সমস্যার সমাধান। তারা এতে আরো দেখতে পেয়েছেন বৈজ্ঞানিক রহস্যপূর্ণ অনেক আয়াত,  যেগুলো পড়ে তাঁরা অবাক হয়েছেন। তাই তারা বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, পবিত্র কোরআন হলো মহান আল্লাহর শাশ্বত বাণী যা মেনে চললে মানুষ পৃথিবীতে উপভোগ করতে পারে অনাবিল সুখ-শান্তি এবং লাভ করতে পারে পরকালে মুক্তি। শুধু তাই নয়, কোরআনের মোজেজায় মোহিত হয়ে তাদের মধ্যে অনেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিতও হয়েছেন । তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে, সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেকার নাযিলকৃত কোরআন তখনকার কোনো মানব কর্তৃক রচিত হলে তা এতই নির্ভুল, এতই মহীয়ান এবং এতই বৈজ্ঞানিক তথ্যবহুল হতো না। কারণ সেকালে মানুষ ছিল সহজ সরল। বিজ্ঞান সম্পর্কীয় কোনো জ্ঞান তাদের ছিল না।

যাহোক, পবিত্র কোরআন যে আল্লাহর নির্ভুল বাণী, মানব রচিত কোনো গ্রন্থ নয়, তা লেখক কোরআনের মাত্র কতিপয় বৈজ্ঞানিক রহস্যপূর্ণ আয়াতের উদ্বৃতি দ্বারা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এদিক দিয়ে বইটি কোরআন সম্পর্কে বাজে মন্তব্যকারীদের  একটি দাঁতভাঙা জবাবও বটে।

পরিশেষে , আমার স্বল্প জ্ঞানে বইটি অনুবাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস দ্বারা সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ পবিত্র কোরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনে উপকৃত হলে, আমি আমার শ্রম সার্থক ভাববো।  বইটি সর্বসাধারণের বোধগম্যের উপযোগী  করে অনুবাদের প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। তবুও ভুলভ্রান্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি কোথাও এমনটি দৃষ্ট হয়, তাহলে তা পরবর্তি সংস্করণে সংশোধনের জন্যে আমাকে জানালে শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকার  নিকট কৃতার্থ থাকবো।

আল্লাহ্ আমাদের পবিত্র কোরআনের অনুশাসন মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।                                               ***** 

               গ্রন্থাকারের কথা                                             

   প্রিয় মুক্তমনা পাঠক, আজ আমি পৃথিবীর পূর্বাঞ্চল থেকে আপনাদেরকে এতৎসঙ্গে অতি সুন্দর ও মহামূল্যবান একটি উপহার প্রদান করবো। উপহারটি হবে পবিত্র কোরআনের কতিপয় আয়াত, যেগুলো অবশ্যই আপনাকে বিস্মিত করে তুলবে এবং আপনার বিবেককে নাড়া দেবে। কারণ, এসব আয়াতে আপনি এমন কতিপয় সার্বজনীন বিধান পেয়ে থাকবেন, যেগুলো সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত হওয়ার বহু শতাব্দি পরে বিজ্ঞান  কর্তৃক সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র। এসব আয়াতের রহস্য জেনে আপনার ভেতর জেগে উঠবে এক পরম আনন্দ এবং মহাসত্য অন্বেষার প্রবল উদ্দীপনা। এগুলো আপনাকে মুক্তির পথ দেখাবে আর যেসব মিথ্যুক ধর্মযাজক বিধাতার শাস্তিকে ভয় না করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্যে সব সময় মিথ্যা ও মনগড়া তথ্যের ব্যাখ্য দিয়ে তাদের অনুসারীদের ভয়ঙ্কর ভুলপথে পরিচালিত করে এবং তাদের ভুল তথ্য ও মনগড়া  মতবাদসমূহ শৈশব থেকে যদি আপনার মনেও বদ্ধমূল থাকে, তাহলে সেগুলোর বিলুপ্তি ঘটিয়ে ধর্মান্ধতার ছোবল থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। 

  

যাহোক, একমাত্র জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ পবিত্র কোরআনের এসব তথ্য অবশ্যই অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন:-

 وليعلم الذين اؤتؤاالعلم انه الحق من ربك فيؤمنوابه فتخبت له قلوبهم و ان الله لهاد الذين امنوا الى صراط مستقيم-٢٢-٥٤ .
                                                                "অতঃপর, যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারাই জানবে যে এটি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সত্য।"-(সূরা-২২, আয়াত-৫৪)।

আল্লাহ্ আরো ইরশাদ করেন। 

انما يخشى الله من عباده العلماوءا--٣٥-  ٢٨

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই  আল্লাহকে ভয় করেন। ( সূরা- ৩৫, আয়াত-২৮)

লক্ষণীয় যে, অত্র বইয়ে পবিত্র কোরআনের যেসব আয়াতের আলোচনায় রয়েছে সেসব আয়াত বৈজ্ঞানিক তথ্যসমৃদ্ধ। তবে ওসব তথ্যের সুস্পষ্ট আলোচনা আয়াতগুলোতে করা হয়নি। কারণ, যে সময় কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল সে সময়কার লোকদেরকে ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথে আনয়ন করাই ছিল কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে প্রসঙ্গক্রমে বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু তথ্যের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল মাত্র। যদি  ওই যুগে সেসব তথ্য সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করা হতো, তাহলে সে যুগের অবিশ্বাসী  লোকজন ওগুলো মিথ্যা ও আজব কথা বলে উপহাস করতো এবং সেগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতো, যেহেতু কোরআনের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা বোঝার মতো জ্ঞান তাদের ছিল না।

   কোরআনে এগুলো সুক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল একারণে যে, পরবর্তি প্রজন্ম যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানে জেগে উঠবে, তখন এসব বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি তাদের কছে অলৌকিক হিসেবে ধরা পড়বে, যেমনটি আজ আমাদের কাছে ধরা পড়েছে। বর্তমানে এসব বৈজ্ঞানিক সত্য জ্ঞানীদের কাছে নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে, অনেক  অমুসলিম জ্ঞানী এসব আয়াতের 'তাৎপর্যে মোহিত হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ করেন;-

سنريهم ايتنا فى الاقاق و فى انفسهم حتى يتبين لهم انه الحق- ٤١-٥٣.
                                                                           "আমি শীঘ্রই তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাবো নানা দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ফলে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে এটাই সত্য।" (সূরা- ৪১, আয়াত:- ৫৩)।

   গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এটিও পবিত্র কোরআনের একটি অলৌকিক আয়াত। কারণ, এ আয়াতটি "নানা দিগন্তে" ( فى الافاق) এবং  (وفى انفسهم) "তাদের নিজেদের মধ্যে" ভবিষ্যৎ আবিষ্কারের আভাস দেয়। ( এখানে " নানা দিগন্ত" দ্বারা, বিশাল ব্রহ্মাণ্ডকে, আর "তাদের নিজেদের মধ্যে" দ্বারা মানব দেহের অঙ্গসংস্থানিক, শারীরবৃত্তীয় ও মনস্তাত্ত্বিক আবিস্কারসমুহকে বুঝায়)।

অতএব, আয়াতটি যে অলৌকিক তা কোন সৎচিন্তাশীল ও সুবিবেচক ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ, এ কোরআন যে যুগে অবতীর্ণ হয়েছিল, সে যুগে মানুষ ছিল সহজ সরল। ছিল না তাদের কাছে আধুনিক সভ্যতার কোনো যন্ত্রপাতি। তারা কখনো ভাবতেও পারে নি যে মানুষ একদিন টেলিস্কোপ দিয়ে দেখবে দূরাকাশের নক্ষত্ররাজি, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা দেখবে এমন ক্ষুদ্র জীবাণু যা খালি চোখে দেখা যায় না, সাবমেরিন দ্বারা পাড়ি দেবে মহাসমুদ্র আর পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করার জন্য প্রেরণ করবে স্যাটেলাইট।

আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি , যাতে তিনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, ভ্রান্তপথ পরিহার করে চলার সচেতনতা দান করেন এবং পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমের সকল জাতির মানুষকে একটি মাত্র সঠিক ধর্মের মাধ্যমে একতার বন্ধনে আবদ্ধ করেন। সংঘাত এবং যুদ্ধের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে বিশ্বের সকল মানুষকে রক্ষা করে প্রকৃত সুখ সমৃদ্ধি দান করেন। মানবগড়া ব্যর্থ মতবাবাদ, বিধি-নিষেধ যেগুলোতে হীন জাতীয়তাবাদের সৃৃষ্টি হয়ে বিভাজন, সংঘাত ও দমন পীড়নের মাধ্যমে মনুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, তা থেকে তিনি যেন মানব জাতিকে রক্ষা করেন।

      আল্লাহর মনোনিত শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানায় এবং ঘোষণা করে যে, পৃথিবীর সব মানুষ একই পরিবার থেকে আগত। এ পরিবারে মানবজাতির সেবা যে বেশি করবে সে অন্যের চেয়ে অধিকতর উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

      ইসলাম মানবজাতিকে যে একটি চিরস্থায়ী ও নির্ভুল স্বর্গীয় বিধান দান করেছে, তাতে বিন্দুমাত্র ভুলের অবকাশ নেই। এ বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব এবং নির্ভুলতার সমর্থন বর্তমানে বেড়েই চলছে এবং ভবিষ্যতেও উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে।

      ইসলাম ধর্মের শাসননীতি ও ভৌতিকনীতি উভয়টি যে বিধাতার গড়া, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাই,  জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যেককে এগুলো জানতে হবে এবং বাস্তব জীবনে এগুলোর প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

    এ বইয়ের শেষে ইসলামের মূল নীতিমালা আলোচিত হয়েছে। এগুলো পাঠে যে কোন পাঠক পরমানন্দ লাভ করতে পারবেন।

     পরিশেষে, সম্মানিত পাঠককে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, পবিত্র কোরআনের ভাষা অত্যন্ত অলংকার সমৃদ্ধ যা পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় আক্ষরিক অনুবাদ খুবই কষ্টসাধ্য। তাই, এর অনেক আয়াতের ভাবানুবাদ করতে হয়। এ বইয়ে উল্লিখিত পবিত্র কোরআনের কতিপগয় আয়াত যেগুলোর ভাষা অলংকার সমৃদ্ধ সেগুলোর সঠিকভাবে ভাবানুবাদ করা হয়েছে। আপনি যদি আরবি ভাষায় কোরআন পাঠ করে থাকেন, তাহলে এর শব্দালংকার ও বাক্যালংকার দেখে বিস্মিত হয়ে যাবেন। পবিত্র কোরআন বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহর বাণী বিধায় এর ভাষা  এতই অনুপম। 

                         *****

পবিত্র কোরান ও আধুনিক বিজ্ঞান

                     …...…

আল্লাহর জ্ঞানে বিশালতা আর মানব জ্ঞানে      ঘাটতি

قل لو كان البحر مدادا لكلمات ربى لنفد البحر قبل ان تنفد كلمات ربى ولو جءنا بمثله مددا--١٨-١٠٨.                   
                                                                          " যদি আমার প্রভুর কথা  লেখার জন্যে সমুদ্রের পানি কালি হয়, তাহলে আমার পালনকর্তার কথা শেষ হওয়ার আগে সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে, এমনকি এর সাহায্যার্থে আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।" -(সুরা-১৮, আয়াত-১০৮)।

ولو ان ما فى الارض من شجرة اقلام
والبحر يمده من بعد ه سبعة ابحر مانفدت كلمات الله ان الله عزيز حكيم-٣١  -٢٧

"পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথে সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হলেও আল্লাহর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না।"- ( সুরা-৩১, আয়াত- ২৭)

  ওপরের আয়াত দুটিতে  (كلمات الله) "আল্লাহর কথা" দ্বারা তাঁর সৃষ্টিকর্ম ও জ্ঞানের কথা বুঝানো হয়েছে এবং আরো জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে  প্রকৃতির রহস্যসমুহ অতি গভীর যেগুলোর গুটি কয়েক রহস্য সম্পর্কে আমরা জেনেছি মাত্র। বাকি সব আমাদের নিকট সম্পূর্ণরূপে অজানা রয়ে গেছে। বর্তমান বিজ্ঞানীগণ অনেক কিছুর সন্ধান ও অনেক তথ্য আবিষ্কারে সক্ষম হয়েও তারা আল্লাহর এ বাণী অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। এ আয়াতদ্বয় অবশ্যই বিজ্ঞানীদের আরো বেশি বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অধ্যয়নের প্রেরণা দান করেছে।

و يسئلونك عن الروح ط  ِقل الروح من      امر ربى وما اوتيتم من العلم الا قليلا-١٧ -٨٥ 

"তারা আপনাকে (روح) "আত্মা" সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন আত্মা আপনার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান দান করা হয়েছে।" -(সুরা-১৭, আয়াত-৮৪)

   এ মহাবিশ্বের সকল গুপ্তরহস্য হৃদয়ঙ্গম করার ব্যাপারে মানুষ যে অক্ষম এ আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছ। এ বিষয়ে বর্তমান বিজ্ঞানীরাও 
একমত পোষণ করেছেন। হার্বাট স্পেনসারও এ বিষয়টি সমর্থন করেন। তিনি মানুষের জ্ঞান সম্পর্কে অনেক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এ কথায় উপনীত হয়েছেন যে, মানুষের জ্ঞান পূর্ণরূপে বোধশক্তি সম্পন্ন নয়।

মানবজ্ঞানে বোধশক্তির ঘাটতি রয়েছে বিধায় পবিত্র কোরআনের এ ঘোষণাটি বিজ্ঞানীদেরকেও আহ্বান করেছে যে, কোরআনে ঘোষিত এ জাতীয় যেসব তথ্য তারা অনুধাবন করতে পারবে না সেসব তথ্য যেনো অস্বীকার না করে। মানুষের জ্ঞানে পূর্ণ বোধশক্তির অভাব রয়েছে বিধায় অদৃশ্য জগৎ ও অতি প্রাকৃতিক বিষয়ে কোনো কোনো জ্ঞানী অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন, আবার পরবর্তি বিজ্ঞানীগণ কর্তৃক ওই সব বিষয়ের বৈধতা প্রদান করতেও দেখা যায়।

   পবিত্র কোরআন বিজ্ঞানীদেরকে মুক্তমনে মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা করার আহ্বান জানায়,
পাশাপাশি কখনো বৃথা গর্বে  হৃদয় ভরে না রাখারও জোরালো নির্দেশ দিয়ে থাকে। উপর্যুক্ত আয়াত দ্বারা এ বিষয়টির প্রতিও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

                        *****


রাসায়নিক , জৈবিক ও আনবিক রহস্য 

و ان من شئ الا عندنا خزائنه وما ننزله الا بقدر معلوم- (١٥ـ ،١٢  

    "এমন কোন বস্তু নেই যার উৎস আমার কাছে নেই এবং আমি যে বস্তু প্রেরণ করি তা' নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রেরণ করি।"- (সুরা - ১৫, আয়াত- ২১)

     এ আয়াত দ্বারা রাসায়নিক বিধান ও আণবিক ভরের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে প্রকৃতিতে প্রত্যেক বস্তুর ভর ও দূরত্ব সতর্কতা সহকারে সঠিক পরিমাপে স্থাপন  করা হয়েছে। যখন কোনো বস্তুর ভর এবং দূরত্ব বাড়ে বা কমে, তখন ওই বস্তুর গুণের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

   এ সব রাসায়নিক এবং জৈবিক রহস্য বহু শতাব্দী  পূর্বে নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ (সা.) কি নিজ প্রচেষ্টায় জানতে পেরেছিলেন? মহান আল্লাহ তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিরক্ষর ও অশিক্ষিত রেখেছিলেন ঐশ্বরিক অলৌকিকতা প্রমাণ করার জন্যে।

       এ বিশ্বে সবকিছু সঠিক পরিমাপে ও যথাযথভাবে আল্লাহ সৃজন করেছেন। যেমন, বাতাসে রাখা হয়েছে একুশ ভাগ অক্সিজেন। যদি এ বাতাসে পঞ্চাশ ভাগ অক্সিজেন রাখা হতো, তাহলে পৃথিবীতে সকল দাহ্যপদার্থ জ্বলে ছাই হয়ে যেতো। অনুরূপভাবে বিদ্যুৎ একটি বৃক্ষকে আঘাত করার সাথে সাথে সমগ্র বনও পুড়ে ভষ্ম হয়ে যেতো।

      সূর্যরশ্মিও অনুরূপ পরিমিতভাবে বিকীর্ণ হয়। যদি সূর্য তার অর্ধেক তাপশক্তি প্রদান করতো, তাহলে আমরা পৃথিবীতে হিমায়িত হয়ে যেতাম। আর যদি এ সূর্য তার দ্বিগুণ তাপ প্রদান করতো, তাহলে আমরা জ্বলে ভষ্ম হয়ে যেতাম। এমন কিছু ঘটে যাওয়ার আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।

    পদার্থ বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেন যে, যদি দৈবাৎ এমন কিছু ঘটে, তাহলে সব গাণিতিক বিধানের বিপরীতে চলে যাবে; বিশৃংখল হয়ে যাবে পৃথিবীতে সবকিছু। মহান স্রষ্টার বিজ্ঞ পরিকল্পনায় পৃথিবীতে সবকিছু সুবিন্যস্ত হয়েছে বিধায় এমন বিপর্যয় ঘটছে না।

   অত্র আয়াতে  " নির্দিষ্ট পরিমাণ  (بقدر معلوم  )" যে কথাটির উল্লেখ রয়েছে সে আলোকে দেখা যায় যে, পৃথিবীতে উদ্ভিদের সকল অংশও ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। পদার্থ বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রমাণিত যে, একটি উদ্ভিদ যথাযথভাবে পরিমিত ও সমানুপাতিক উপাদানে গঠিত। এ পরিমিত ও সমানুপাতিক উপাদান উদ্ভিদের ভিন্নতা অনুযায়ী ভিন্নভাবে রয়েছে।  আশ্চর্যের  ব্যাপার হলো যে, বস্তুর এ নির্ভুল ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে আর কারো মস্তিষ্কে ধরা পড়েনি। অথচ, বিজ্ঞানীদের বহু শতাব্দী পূর্বে আল্লাহ কর্তৃক নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নিকট প্রেরিত কোরআনের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) কি নিজ প্রচেষ্টায় পৃথিবীর সর্বপ্রকার উদ্ভিদকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে এ তথ্য প্রদান করেছেন।

   "আমি হলফ করে বলতে পারি যে, তোমরা যেগুলো দেখ এবং তোমরা যেগুলো দেখ না  সেগুলো আমি দেখি।"

         অনেক পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, অত্র আয়াতে "যেগুলো তারা দেখে না" শব্দের উল্লেখ রয়েছে তা' দ্বারা জিন এবং ফিরেস্তাদের কথা বলা হয়েছে। তাদের এ চিন্তা যথাযথ নয় বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ,  "যেগুলো" শব্দটি হলো একটি সর্বনাম। এটি বহুবচন অর্থে প্রাণহীন বস্তু ও ইতর প্রাণীর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, অত্র আয়াতে এটি দ্বারা অদৃশ্য বস্তু এবং জীবাণুকে বুঝানো হয়েছে। অদৃশ্য বস্তু যে আছে তা বর্তমান বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন। কারণ, তাঁরা অদৃশ্য বস্তুর জগত আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা অদৃশ্য জগতে দেখতে পান 'অণু' যা খালি চোখে দেখা যাওয়া তো দূরের কথা, অনেক ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপ দ্বারাও দেখা যায় না। ইলেকট্রোন, প্রোটন, ইত্যাদিও দেখা যায় না, যদিও বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে আমরা, এগুলোর প্রকৃতি, সংখ্যা, ওজন এবং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া জানতে সক্ষম হয়েছি। অদৃশ্য জগতে জীবাণুও রয়েছে যা অতি বেগুনী-রশ্মি, তড়িৎচৌম্বক- রশ্মি, গামা-রশ্মি, এক্সরে ইত্যাদি ছাড়া কখনো খালি চোখে দেখা যায় না।

   পরিশেষে বলা যায়, যেসব গুরুত্বপূর্ণ  অদৃশ্য বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর বৈজ্ঞানিক গুরুত অনুসন্ধান করার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্যে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ হলফ করে বলেছেন যে, মানুষ চেষ্টা করলে এ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করতে পারবে।

     প্রিয় মুক্তমনা পাঠক, এ কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই যে, কোরআন আল্লাহর বাণি বিধায় অদৃশ্যের এ তথ্যটি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের বহু শতাব্দী পূর্বে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ জোরালোভাবে ইঙ্গিত দিয়েছন যাতে মানুষ এটি জানার জন্যে কৌতুহলী হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, 

قال ياايهاالملوءا ايكم يآتيني بعرشها قبل ان يآتوني مسلمين قال عفريت من الجن انا اتيك به قبل ان تقوم من مقامك وانى عليه لقوى امين ـ قال الذى عنده علم من  الكتاب انا اتيك به قبل عن يرتد اليك طرفك فلما رآه مستقرا عنده قال هذا من ربى ليبلوني ءاشكر ام اكفر ومن شكر فانما يشكر لنفسه ومن كفر فان ربى غني كريم-٢٧ -٣٨ 

"সুলাইমান  বলল, "হে সভাসদগণ! তারা অনুগত হয়ে আমার কাছে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার ( বিলকিসের ) সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারো? " জনৈক দৈত্য জিন বলল, "আপনি in স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি এ কাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।" কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, "আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব।" অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন, "এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। এর দ্বারা তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি নাকি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের উপকারের জন্যেই করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত, কৃপাশীল।"  (সূরা- ২৭, আয়াত-৩৮)।

  জেরুযালেম থেকে ১২০০ মাইল দূরে ইয়ামেনের রাণী বিলকিসের সিংহাসন কিতাবের জ্ঞানসম্পন্ন অন্যতম  একজন সাহসী জিন দ্বারা  চোখের পলকে হযরত সুলায়মান (আ.) এর সামনে যে আনীত হয়েছিল, সে ঘটনাটি অত্র আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। মূলত এটি ছিল হযরত সোলায়মান (আ.)কে স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত  একটি মোজেজা।

     এমন ঘটনা প্রাচীন কালের লোকেরা অসম্ভব জ্ঞান করতো। ঘটনাটি যে বাস্তবে ঘটেছিল সে সম্পর্কেও কতিপয় লোক সন্দেহ পোষণ করতো। কারণ, আল্লাহর শক্তির মাহাত্ম্য সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। যদি তারা আজকের মত একবিংশ শতাব্দীতে বাস করতো, তাহলে বিশ্বের ঘটমান বিষয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকলেও তারা দেখতে পেতো ওই সব ব্যক্তিদেরকে যারা বিশাল বিশাল যান নিয়ে  মহাকাশ পাড়ি দিচ্ছে আর আমাদের মত বাস্তবে দেখতে পেতো কীভাবে  রকেট তড়িৎ গতিতে অতি ভারী বিস্ফোরক বা অন্য কোন বস্তু নিয়ে এক মহাদেশ থেকে অপর মহাদেশে পাড়ি দিচ্ছে। আরো দেখতে পেতো পৃথিবীর চারদিকে গ্রহ উপগ্রহে  কীভাবে নভোযান পরিচালিত হচ্ছে। ফলে, তারা নিশ্চিত হতে পারতো যে, বিলকিসের সিংহাসন সংক্রান্ত ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য ছিল।
 
   বর্তমান বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত স্থলযান, জলযান ও মহাকাশযান থেকে নবীদের বিধাতা প্রদত্ত মোজেজা যে কত বেশি শক্তিশালী তা কোরআনের এ আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। 

      

    والذى خلق الاازواج كلها-٣٤-١٢

     "তিনিই সে সত্বা যিনি সবকিছু জোড়ায়  জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন।"-(  সুরা-৪৩ -আয়াত-১২)  

লিঙ্গান্তকরণ শুধু মানুষ ও জীবজন্তুর মধ্যে রয়েছে। আর উদ্ভিদগুলো জড়ো পদার্থের মতো, তাতে কোনো লিঙ্গান্তর নেই। এটি ছিল প্রাচীন লোকদের ধারণা। কিন্তু পবিত্র কোরআনে উদ্ভিদের যুগল সম্পর্কে বলা হয়েছে, "তারা কি ভূমির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না কীভাবে আমি সব শ্রেণির উদ্ভিদকে স্বজাতীয় যুগলে মাটি থেকে বের করে আনি?" এবং মানুষ ও প্রাণিকূলের যুগল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:-

فاطر السماوات والارض جعل لكم من انفسكم اجواجا  ومن الا نعام اجواجا - ٤٢ -١١

" তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের আপন প্রজাতি থেকে তোমাদের জন্যে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকেও জোড়া সৃষ্টি করেছেন।"  ( সূরাঃ ৪২, আয়াতঃ১১)।

      তবে যুগল শুধু যে জীবন্ত বস্তুর মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে সে কথা পবিত্র কোরাআনে উল্লিখিত হয় নি; এটির বিস্তার যে সকল বস্তুর মধ্যে রয়েছে তাও সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এর ইন্তেকালের প্রায় ১৪০০ শত বছর পর বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে, ধণাত্মক ও ঋণাত্মক(Positive ও Negative) চার্জ বলে দুটি উপাদান রয়েছে যেগুলোর সংযোগে বিদ্যুত উৎপন্ন হয়ে থাকে। পরমাণুরও অতি ক্ষুদ্র কেন্দ্রীয় কণা রয়েছে যেগুলোকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। আর এগুলো যা অপর ক্ষুদ্র কণা দারা পরিবেষ্টিত, তাকে বলা হয় ইলেকট্রোন। নিউক্লিয়াসের রয়েছে একটি ধণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ আর ইলেকট্রোনের রয়েছে বৈদ্যুতিক ঋণাত্মক চার্জ। 

      এর দ্বারা বুঝা যায় যে পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যৎ বাণী কতইনা বিস্ময়কর! এটি আল্লাহর কালাম বিধায় এমনটি সম্ভব হয়েছে।

وما يعزب عن ربك من مثقال ذرة فى الارض ولا فى السماء ولا اصغر من ذالك و لا ا كبر الا فى كتاب مبين- ١٠ -٦١

" আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে কোনো অণু পরিমাণ বস্তুও নেই এবং এর চেয়ে ছোট বা বড় কোনো জিনিসও নেই, যা তোমার রবের দৃষ্টিতে অগোচরে আছে এবং যা এ সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই (আয়াতঃ ১০, সুরাঃ ৬১)।

          পবিত্র কোরআনের এ আয়াত অণুর (Atom) বিভাজনের ইঙ্গিত দিয়েছে। আর এ বিভাজনটি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ১৯১৯ সালে। কিন্তু এর আগে তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, অণুর একক গঠনের কারণে কখনো এটির বিভাজন সম্ভব নয়। অথচ, এ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ( اصغر من ذالك) "এর চেয়ে ক্ষুদ্র" এর মানে অণুর চেয়েও আকারে ক্ষুদ্র। অর্থাৎ যা হতে পারে অণুর অংশ। পৃথিবীতে সবচেয়ে হালকা অণুর ওজন হলো ০.০০০০০০০০০০০০০০০ ১৬৬ গ্রাম।

     প্রশ্ন জাগে, মুহাম্মদ (সা.) বিজ্ঞানীদের অনেক পুর্বে অনু নিয়ে গবেষণা করেছিলেন কি? অবশ্যই না। কারণ এটি উনার কথা নয়, এটি হলো মহান আল্লাহর বাণী। কোরআন যে আল্লাহর প্রেরিত কিতাব তার আরেকটি শক্তিশালী দলিল হলো এ আয়াত।
                          ***** 

               আকাশের রহস্য

هو الذى جعل  الشمس ضياء والقمر  نورا وقدره  منازل لتعلموا عدد السنين ؤ الحساب ما خلق الله ذالك الا باالحق يفصل الايات لقوم يعلمون -١٠ -٥

" তিনি সূর্যকে নির্ধারণ করেছেন উজ্জ্বলতার জন্যে আর চন্দ্রকে আলোর জন্যে এবং এর মঞ্জিলও ঠিকমত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যাতে তোমরা এর সাহায্যে বছর গণনা ও তারিখ হিসেব করতে পারো। আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি। যারা জ্ঞানবান তাদের জন্যে তিনি নিজের নিদর্শনসমূহ বিষদভাবে পেশ করেছেন। (সূরা-১০, আয়াত- ৫)।

تبارك الذى جعل فى السماء بروجا وجعل فيهاسراجا و قمرا منبيرا - ٢٥ -٦١

   " অসীম কল্যাণময় তিনি যিনি নভোমন্ডলে
নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চাঁদ ( সূরা-২৫, আয়াত-৬১)। 

অত্র আয়াত দুটির বিবরণে বুঝা যায় য়ে, চন্দ্র সূর্য থেকে আলো পায় এবং এর প্রতিফলন ঘটায়।
চাঁদের যে নিজস্ব কোনো আলো নেই, এ রহস্যটি পবিত্র কোরাআনে সর্বপ্রথম এভাবে বর্ণিত হয় যা বিজ্ঞান সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে মাত্র।

الله الذى رفع السماوات بغير عمد - ١٣ -٢ 

"আল্লাহ, যিনি ঊর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলীকে স্থাপন করেছেন অদৃশ্য ভরে।" (সূরা-১৩, আয়াত-২)।

অত্র আয়াত দ্বারা গ্রহসমূহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবের কথা বলা হয়েছে যা  সম্প্রতি বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভুল ধারণা ছিল যে, মহাকাশে প্রত্যেকটি গ্রহ তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবদ্ধ ছিল। তবে, বাস্তবে এমন কিছু অদৃশ্য ভর রয়েছে যেগুলো মহাকর্ষ পুলের সাথে অভিন্ন। এগুলো পৃথিবী ছাড়া সব জ্যোতিষ্ককে নির্ধারিত কক্ষপথে ঘোরাতে সাহায্য করে।

وجعلنا السماء سقفا محفوظا وهم عن أياتها معرضون-٢١-٣٢

  "এবং আমি আকাশকে একটি সুরক্ষিত ছাদ বানিয়েছি, তবুও তারা এর নিদর্শন থেকে বিমুখ।" (সূরাঃ‌২১, আয়াতঃ ৩২)।

      প্রাচীন পন্ডিতগণ এ আয়াতটির ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেন যে, আকাশ একটা ছাদের মতো আর এর ঘর হচ্ছে ভূমি। এ ভূমির উপর পতিত না হওয়ার মতো করে আল্লাহ একে সুরক্ষিত করে তৈরি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা এর অন্য ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারি। এখানে আকাশ বলতে বায়ুমন্ডলকে ধরে নেয়া যায়। এ বায়ুমন্ডল দ্বারা প্রথিবীর প্রাণিকূল সুরক্ষা পায়। জীব বিজ্ঞানী ফ্রাক এলেন (Frank Allen) বলেন, " জীবন ধারণের মতো প্রয়োজনীয় গ্যাসীয় আবরণ দ্বারা বায়ুমন্ডল ঢাকা থাকে। এ আবরণের উচ্চতা ৫০০ মাইলেরও বেশি। এর ঘনত্ব এত বেশি যে, এর কারণে মহাকাশের কোটি কোটি উল্কাপিন্ডু আমাদের নিকট পৌঁছাতে পারে না। বায়ুমন্ডল প্রতি সেকেন্ডে উল্কাপিন্ডুর ৩০ মাইল গতিবেগ কমিয় দেয়। এ গ্যাসীয় আবরণ ভূমন্ডলকে বেষ্টন করে রাখে এবং প্রাণির জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার অবস্থান রেখা বজায় রাখে। এটি মহাসমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্প বহন করে। এ জলীয় বাষ্প এখানে ঘণিভূত হয়ে
ভূমিতে বারিরূপে পতিত হয়। বৃষ্টি হচ্ছে স্বচ্ছ পানির একমাত্র উৎস। এটি ব্যতিরেকে পৃথিবী হতো উদ্ভিদশূন্য এক মরুভূমি, যেখানে জীবনের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না।

   সুতরাং, আমরা দেখতে পাই যে, বায়ুমন্ডল এবং সমুদ্র ভূ পৃষ্ঠের উপর প্রকৃতির ভারসাম্য চাকা হিসেবে কাজ করে থাকে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ আমাদের এ অপরূপা ভূ মন্ডলের এমন বিস্ময়কর তথ্য প্রদান করেন।

فمن يرد الله ان يهديه يشرح صدره للاسلام ؤمن يرد ان يضله ان يجعل صد ره ضيقا حرجا كانما يصعد فى السماء كذالك  يجعل الله الرجس على الذين لا يؤمنون -٦ - ١٢٥

"অতঃপর, আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করাতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে প্রসারিত করে দেন আর যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন, যেনো মনে হয় সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না, আল্লাহ তাদের প্রতি আযাব বর্ষণ করে থাকেন।"  (সুরাঃ ৬,  আয়াত ১২৫)

    অত্র আয়াত দ্বারা নভোচারীদের মহাকাশ অভিযানের সময় দম বন্ধের মতো যেসব বিরক্তিকর উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলোর প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, যা ঊনবিংশ শদাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞান কর্তৃক পরীক্ষা-নীরিক্ষা দ্বারা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। মহাকাশে বায়ুমন্ডলের নিম্নচাপ, অপর্যাপ্ত অক্সিজেন, অপরিবর্তনশীল তাপমাত্রা, এবং আকাশচারীদের ওজন হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি এসব উপসর্গ দৃষ্ট হওয়ার মুল কারণ। চৌদ্দশত বছর আগে কোরআনে উল্লিখিত এমন অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে বেলুন এবং উড়োজাহাজযোগে মহাকাশ ভ্রমণ করতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। পরবতীতে যেসব বৈমানিক মহাকাশ ভ্রমণ করার ইচ্ছে পোষণ করতেন, তারা ব্যবহার করতেন অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ুনিরোধক নভোযান, যেটিতে সংরক্ষিত থাকতো বৈদ্যুতিক তাপযুক্ত পোশাক এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্যে অক্সিজেনের কৃত্রিম ব্যবস্থা।

اذ السماء النفطرت و اذالكواكب انتثرت ـ ٨٢ ـ ١ـ٢

    " যখন আকাশ বিদীর্ন হবে; যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে "  ( সুরাঃ ৮২-- আয়াতঃ ১-২)।

কেনসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের  অধ্যাপক ড, ওয়ালটার ১৫ বছর ধরে গ্রহ  এবং নক্ষত্রসমূহ পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হন যে, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র এবং পৃথিবী একদিন বিদীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যাবে এবং এ সৌর ব্যবস্থা অসীম মহাশূন্যের গহ্বরে বিলীন হয়ে যাবে। উল্লিখিত আয়াতকে তার এ বিবৃতি সমর্থন করে।

 
      ثم استوى الى السماء وهى دخان فقال  لـهاوللارض اءتيا طوعا او كرها قالتا اتينا طاءعين ـ ٤١ ـ ١١

"অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেছেন, যা ওই সময় কেবল ধোঁয়া ছিল। তিনি আসমান ও জমিনকে বললেন, "ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক তোমরা অস্তিত্ব ধারণ করো। উভয়ে বললো, " আমরা অনুগতদের মতো
অস্তিত্ব গ্রহণ করলাম।" (  সূরাঃ ৪১, আয়াতঃ ১১)।

কোরআন ঘোষণা করে যে, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের শুরুতে আকাশ ছিল (دخان) ধোঁয়াশা। জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিষেশজ্ঞরা এ মতের সাথে সর্বসম্মতি জ্ঞাপন করেন। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস জেনস বলেন, " মহাবিশ্বের উপাদান সম্ভবত গ্যাস যা' পুরো স্থান জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়া আরম্ভ করেছিল। এ গ্যাস যখন ঘনিভূত হয়েছিল, তখন অসংখ্য উল্কাপিন্ডু সৃষ্টি হয়েছিল।

  বিশ্বসৃষ্টির প্রথম উৎসের ব্যাপারে পবিত্র  কোরআনে "গ্যাস" এর পরিবর্তে "ধোঁয়া" শব্দটি ব্যবহার করেছে, যা আরবদের নিকট বোঝার ব্যাপারে অত্যন্ত নির্ভুল প্রতীয়মান ছিল।

       এখন প্রশ্ন জাগে, নিরক্ষর মুহাম্মদের (সা.) এর পক্ষে এ বৈজ্ঞানিক তথ্যবহুল বিষয়টি ১৪০০ বৎসর পূর্বে জানা কি সম্ভব ছিল, যখন মানুষ আধুনিক প্রযুক্তিগত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানতো না?

     বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.) কে এ বিষয়ে অবগত করিয়েছিলেন বিধায় তিনি এ ধারণা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
                          

اولم ير الذين كفروا ان السموات والارض كانتا رتقا ففتقنهما وجعلنمنا من الماء كل شيئ حيئ افلا يؤمنون ــ٢١ ــ٣٠

يوم نطوى السماء كطئ السجل للكتب  كما بدآ نا اول خلق النعيده وعدا علينا انا كنا فاعلين-  ٢١-١٠

"কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলীর ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এর পরও কি  তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? " (সুরাঃ ২১-  আয়াতঃ ৩০)

" সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেবো, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।" (সূরাঃ ২১- ১০৪)।

    এখানে প্রথম আয়াতটি প্রাণীর জীবনে  (الماء) অর্থাৎ, পানির প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছে। জীবন এবং এর বর্ধনের প্রয়োজনে অত্যধিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্যে প্রয়োজন হয় পানি আর এ পানি পৃথিবীতে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।

      পানির আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলোর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ তার সৃষ্টির কল্যাণে এটি সৃষ্টি করেছেন। এটি একমাত্র পদার্থ যা বরফে পরিণত হয়ে ওজনে হাল্কা হয়ে যায়। এ আশ্চার্য জল-সম্পদ জলজ প্রাণীর জীবন রক্ষার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন তাপমাত্রা শূন্যে নেমে আসে, তখন এটি বরফে পরিণত হয়ে সমুদ্র বা হ্রদের তলদেশে না ডুবে পানির ওপর ভাসতে থাকে।

        বরফ একটি পৃথক স্তর গঠন করে এর তলদেশের পানিকে হিমায়িত না হওয়ার জন্যে নিম্ন তাপমাত্রায় রাখে। এ নিম্ন তাপমাত্রায় পানি অধিক পরিমাণ অক্সিজেন চূষণ করে থাকে। যার ফলে  জলজ প্রাণিকুল জীবনধারণে জন্যে নিঃশ্বাস নিতে পারে।

      কোরানের প্রজ্ঞাপূর্ন বাণী কতই না বিস্ময়কর যা এ পৃথিবীতে জীবনের রহস্য  অতি অল্প কথায় ব্যক্ত করে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের এসব আয়াত আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.) এর সত্যবাদিতার পক্ষে একটি শক্তিশালী প্রমাণ।

     এ সব প্রজ্ঞাপূর্ণ ধারণা চৌদ্দশত বছর পূর্বে জ্ঞান ও শিক্ষার কিরণশূন্য মরুভূমিতে একজন নিরক্ষর ব্যক্তি কখনো ব্যক্ত করতে পারে না।

والشمس تجرى لمسثقر لها ذالك تقديرالعزيزالعليم- (٣٦- ٣٨

   " আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব। (সূরাঃ ৩৬, আয়াতঃ ৩৮)।

সূর্যের গতি সম্পর্কীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার হলো দুটিঃ-

১. সূর্য পৃথিবীর মতো তার কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।
২. এটি মহাশূন্যে পূর্বাভিমুখে একটি বৃৃৃহদাকার বক্ররেখার মধ্য দিয়ে একটি বিশাল নক্ষত্রকে আবর্তন করে।

এখানে উল্ল্যেখ্য যে, এ দুটি পাঠ আপাত দৃষ্টিতে আয়াতটির স্ববিরোধী বলে মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। কারণ, প্রত্যেকটি পাঠ সূর্যের গতিগুলোর একটিকে ইঙ্গিত দেয় । "নির্দিষ্ট গন্তব্য " হলো  বৃহদাকার নক্ষত্র যা সূর্য প্রদক্ষিণ করে। অপর দিকে সূর্যের গতি কখনো হ্রাস পায় না, এটি প্রতিনিয়ত তার কক্ষ  পথে ঘুরেই চলে।

فلا اقسم بمواقع النجوم-وانه لقسم لو تعلمون عظيم ٥٦, ٧٥-٧٦

 "বস্তুত, আমি তারকারাজির অবস্থানের শপথ করছি। নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে।" ( সূরাঃ৫৬, আয়াতঃ ৭৫, ৭৬)। 

অত্র আয়াতে একটি বিস্ময়কর বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে যেটি নিয়ে আল্লাহ শপথও করেছেন আর সেটি হলো, তারকারাজির অবস্থান। বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণও তারকারাজির অবস্থান নিরূপণে উৎসাহের সাথে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেদিন তাঁরা তাঁদের গবেষণায় তারকারাজির স্থানসূহের মানচিত্র পূর্ণ করতে পারবেন এবং সে মানচিত্র দ্বারা প্রতিটি নক্ষত্রের স্থান নির্ধারণ করতে পারবেন, সে দিনটি  মানব ইতিহাসে একটি চূড়ান্ত দিন হবে বলে তাঁরা অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ জেমস জেন্স বলেন, " নক্ষত্ররাজির অবস্থানের গবেষণার সফলতা আমাদেরকে মানব চোখে অতি সুন্দর রুদ্ধদৃশ্য দেখার দ্বার উন্মোচন করার চাবি কাঠি প্রদান করবে। বিশাল বিস্ময়কর আকাশের দিকে তাকিয়ে পূর্বে আমরা যা বুঝতে পারি নি তা বুঝতে সক্ষম হবো। যদি সবিস্তারে এমন একটি ম্যাপ অঙ্কিত হয়, তাহলে এটি বিশ্ব সম্পর্কে আমাদেরকে একটি সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করবে।

সুতরাং, আমরা পরিষ্কারভাবে আয়াতটির বিস্ময় সম্পর্কে জানলাম এবং আরো জানলাম দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত শপথের তাৎপর্য।

জ্যোতির্বিদগণ এ শপথের মাহাত্ম্য জানার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটিও সত্যই মহৎ।

 এসব আলোচনা প্রমাণ করে যে কোরআন মুহাম্মদ (সা.) রচিত কোনো গ্রন্থ নয়। এটি তার ওপর নাযিলকৃত আল্লাহর বাণি।

                  الحمد للّٰه رب العٰلمين- ١ -١

" সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক" ( সুরাঃ ১, আয়াতঃ ১)

    অত্র আয়াতে অনেক জগতের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর যুগের জনগণ যে জগতে বসবাস করতো ওই একটি মাত্র জগত ছাড়া অন্যান্য জগৎ  সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। তাই তারা মনে করতো জগত শুধু একটি। এমনকি অধুনা লোকজনও বলাবলি করে থাকে যে, জগত হচ্ছে শুধু একটাই যা তারা দেখে, অনুভব করে এবং যেখানে তারা বসবাস করে। কিন্তু বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং গাণিতিক পরীক্ষা- নিরীক্ষার  মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, সৌর ব্যবস্থাপনায় আমরা যে জগতে বসবাস করি তা মহাকাশের বিশাল ছায়াপথের সাথে কোনো অবস্থায় তুলনা করা যাবে না। মহাকাশের এ ছায়াপথের সংখ্যা কয়েক মিলিয়নের চেয়ে অধিক রয়েছে বলে  বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

  অত্র আয়াতে ' অনেক জগতের প্রতিপালক ' বলতে শুধু পৃথিবী নয়, মহাশূণ্যের এসব জগতের প্রতিও ইঙ্গিত  প্রদান করা হয়েছে।

 মহাজ্ঞানী আল্লাহ প্রদত্ত তথ্য ছাড়া  নবী মুহাম্মদ (সা.) কোনো উৎস থেকে অসংখ্য জগত সম্পর্কে
ধারণা দিতে পারেন না। 

            یغشی الیل النهار یطلبه- ۷-۵۴  
   

     " তিনি রাত দিয়ে দিনকে ঢেকে দেন। তারপর দিন রাতের পেছনে দৌড়িয়ে চলে আসে। " ( সুরাঃ ৭, আয়াতঃ ৫৪)।

    অত্র আয়াত দিন ও রাতের ধারাবাহিক পরিবর্তনের নিগূঢ় রহস্যের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। এটি পৃথিবীর অক্ষীয় আবর্তনের বিষয়টির ইঙ্গিত প্রদান করে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মতে, এ অক্ষীয় আবর্তনের কারণে দিন ও রাত হয়ে থাকে। রুশ নভোচারী গেগরিনের একটি পর্যবেক্ষণ এখানে দেখার মতো একটি বিষয়। যখন তিনি পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন তখন তিনি ভূপৃষ্ঠে দিন ও রাতের দ্রুত  অনুগমন দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন যা এর অক্ষীয় আবর্তনের কারণে ঘটে থাকে।
 
 এছাড়াও পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে আরো অনেক বিবরণ রয়েছে।
                         *****


 

                        পৃথিবী                        

                     والبحرالمسجور- ۷۰-۶ 
        
         "অগ্নিভর্তি সমুদ্রের কসম।" ৷   (৬আয়াতঃ ৭০, সুরাঃ ৬)

   অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ অগ্নিভর্তি সমুদ্রের কসম করেছেন। কোথায় এ অগ্নিভর্তি সমুদ্র?

     যেহেতু পৃথিবীর কোথাও অগ্নিভর্তি সমুদ্র নেই, সেহেতু অত্র আয়াতে  'অগ্নিভর্তি সমুদ্র' বলতে মহান আল্লাহ সম্ভবতঃ  সমুদ্রের মতো ভূগর্ভস্থ অগ্নি পদার্থের ইঙ্গিত দিয়েছেন আর এ অগ্নিপদার্থ সম্প্রতি ভূতত্ত্ববিদগণ কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে।

      অত্র আয়ত দ্বারা পরকালে বিচার দিবসের বিশাল ও ভয়াল অগ্নিসমুদ্র অর্থাৎ জাহান্নামের ইঙ্গিতও দেয়া যেতে পারে।

    অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে, পানি তো দাহ্য নয়, বরং এটি অগ্নি নির্বাপণে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পানি দাহ্য হওয়া পুরোপুরি  সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জাপানিদের বিরুদ্ধে যে আনবিক বোমা প্রয়োগ করা হয়েছিলো তা হাইড্রোজেন  এবং অক্সিজেনকে পানি থেকে আলাদা করে তৈরি করা হয়েছিল। এ ভয়ঙ্কর বোমা বিস্ফোরিত  হওয়ার কারণে হাজার হাজার জাপানির করুণ মৃত্যু ঘটে। এ আলোকে পৃথিবীর সকল সমুদ্রকে পরোক্ষভাবে অগ্নিভর্তি সমুদ্র বলা যেতে পারে।

   কোরআনের এ শ্রেষ্ঠ অলৌকিকত্ব প্রমাণ করে যে, এটি নিঃসন্দেহে মহাপ্রভু কর্তৃক প্রেরিত একটি নির্ভুল ঐশীবাণী।
                         ......

وله الجوار المنشأت فی البحرکالاعلام-  ۵۵-٢٤

       " সমুদ্রের বুকে পাহাড়ের মতো উঁচু ভাসমান জাহাজগুলো তাঁরই।" ( সুবাঃ ৫৫, আয়াতঃ ৬)

     অত্র আয়াত দ্বারা আধুনিক জাহাজ, বিমান ক্যারিয়ার এবং যুদ্ধজাহাজের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যেগুলো দেখতে পাহাড়ের মতো বৃহৎ। এসব জাহাজ শুধু বর্তমান যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে।  নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর যুগে জনগণ পাহাড়ের মতো এসব জাহাজ দেখা তো দূরের কথা, এগুলো নিয়ে কেউ চিন্তাও করতে পারে নি।
                       

و ایة لهم انا حملنا ذریتهم فی الفلک المشحون وخلقنا لهم من مثله ما یرکبون  ٤١-٤٢

" এদের জন্যে এটিও একটি নিদর্শন। আমি এদের উত্তরপুরুষদেরকে  ভরা নৌকায় চড়িয়ে দিয়েছি এবং তারপর এদের জন্যে ঠিক তেমন আরো নৌযান সৃষ্টি করেছি যেগুলোতে এরা আরোহণ করে।" ( সুরাঃ ৩৬, আয়াতঃ ২৪)।

      এ আয়াত দ্বারা বাষ্পচালিত জাহাজের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। এখানে (من مثله) " ঠিক তেমনি" বলতে বাষ্পীয় যানকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলো তাদের উত্তরসূরী অর্থাৎ, বর্তমান যুগের লোকজন দ্বারা চালিত হয়।
                       

رب المشرقین ورب المغربین- ۵۵ -۱۷

" দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল -সবকিছুর পালনকর্তাই তিনি।"

       এ আয়াতে "দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচল"  দ্বারা ইঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে যে, পৃথিবী হলো একটি গোলক। তাই, দ্রাঘিমা অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় ও স্থানের ভিন্নতা হয়ে থাকে।
                   

والسماء بنینها باید و انا لموسعون- ۵۱-۴۷

" আসমানকে আমি নিজ ক্ষমতায় সৃজন করেছি, এবং একে অধিক বিস্তৃত করাচ্ছি " ( সুরাঃ ৫১, আয়াতঃ ৪৭)।
       সম্প্রতি  আবিষ্কৃত একটি বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রতি অত্র আয়াত ইঙ্গিত প্রদান করেছে আর সেই তথ্য সম্পর্কে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সমগ্র বিশ্বের ব্যাসার্ধ ছিল এক হাজার মিলিয়ন আলোকবর্ষ। কিন্তু অধ্যাপক এডিংটনের মতে, এ  ব্যাসার্ধ দশগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে এবং এ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, নক্ষত্ররাজি এবং ছায়াপথসমূহ  রাবার বেলুনের উপর খোদাই করার মতো, যেগুলো অবিরাম সম্প্রসারিত হচ্ছে। সুতরাং মহাকাশের সকল বস্তুকণা স্ব-গতি সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ায় একটি অপরটি থেকে বহুদূর বিস্তৃত হয়। এটিই অত্র আয়াতে উল্লেখিত "  একে  অধিক বিস্তৃত করাচ্ছি। "  এর ব্যাখ্যা।

প্রিয় পাঠক, যদি বলা হয় যে, পবিত্র কোরআন চৌদ্দশত বছর পূর্বে  মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক রচিত হয়েছিল, তাহলে আমার মতে কথাটি হবে হাস্যকর। কোরআন আল্লাহর বাণী না হলে  এসব তথ্য তাঁর পক্ষে দেয়া সম্ভব হতো না। কারণ, তিনি ছিলেন নিরক্ষর। পবিত্র কোরআন দ্বারাও তিনি নিরক্ষর বলে প্রমাণিত।

                                 له ما فى السمٰوات وما فى الارض وما بینهما وماتحت الثرى -٢٠-٢

" যা কিছু আকাশে আছে, যা কিছু পৃথিবীতে আছে, যা কিছু আকাশ এবং জমিনের মাঝখানে আছে, আর যা কিছু ভূগর্ভে রয়েছে সবকিছুর মালিক তিনিই (সুরাঃ ২০ আয়াতঃ ৬)

     অত্র আয়াত দ্বারা ভূগর্ভস্থ খনিজ সম্পদ যথা, পেট্রোলিয়াম, কয়লা ইত্যাদির প্রতি ঙ্গিত প্রদান করা হয়েছ, আর এ খনিজ সম্পদ বিজ্ঞান কর্তৃক সম্প্রতি  আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র। এ সম্পর্কে তখনকার লোকদের কোনো ধারনাই ছিল না। এছাড়াও এ আয়াত দ্বারা পৃথিবী এবং মহাকাশের মধ্যখানে বিদ্যমান ইথারেরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
                           

 وهو الذی مد الارض وجعل فیها رواسی و انهارا-ومن کل الثمرات جعل فیها زوجین الثنین یغشى الیل النهار ان فی ذالک لایت لقوم یتفکرون- ۲۳--۳

" আর তিনি এ ভূতলকে বিছিয়ে রেখেছেন। এর মধ্যে পাহাড়ের খুঁটি গেড়ে দিয়েছেন এবং নদী প্রবাহিত করেছেন। তিনি সব রকম ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায় এবং তিনি দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে ফেলেন। এ সমস্ত জিনিষের মধ্যে বহুতর নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা ভাবনা করে।" ( সুরাঃ ১৩, আয়াতঃ ৩)

এ আয়াত পাঠে বুঝা যাচ্ছে, যে কোনো বৃক্ষের ফল (নারীও পুরুষ) দুটি যুগলের সমন্বয়ে সৃষ্টি। তথ্যটি সম্প্রতি উদ্বিদ বিজ্ঞানী কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছে।

এ আয়াত ফলের গুপ্ত রহস্যের বিবরণ দিয়েছে কিন্তু ফুলের দেয় নি। কারণ কিছু ফুল রয়েছে যেগুলোর যৌন অর্গান নেই।
                    

وترالجبال تحسبهاجامدة وهی تمر مرالسحاب صنع الله الذی اتقن کل شیء انه خبیر بما تفعلون- ۲۷- ۸۸
                            

" এবং তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে করো, অথচ, সেদিন এগুলো মেঘমালার মতো চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরি, যিনি সবকিছুকে  করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করেছো, তিনি তা অবগত আছেন।" (সুরাঃ ২৭, আয়াতঃ ৮৮)

     অত্র আয়াত দ্বারা পৃথিবীর আবর্তনের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। এ তথ্যটি পাঁচ শতাব্দী পূর্বে বিজ্ঞানী কপারনিকাস কর্তৃক আবিষ্কৃত হয়েছিল, যাকে ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান যাজকগণ কর্তৃক নাস্তিকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে  নিগৃহীত করা হয়েছিল।
                                       

اولم یروا انا ناتی الارض ننقصها من اطرافها  والله یحکم لا معقب لحکمه وهو سریع الحساب-۱۳-۴۱۔

"এরা কি দেখে না আমি এ ভূ-খন্ডের ওপর  এগিয়ে চলেছি এবং এর গন্ডি চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করে এনেছি।" ( সুরাঃ ১৩, আয়াতঃ ৪১)।

 পৃথিবী গোলাকার, কিন্তু  এটি সম্পূর্ণ গোলাকার নয়। এটি মেরু অঞ্চলদ্বয়ে কমলাকৃতির আর বিষুবরেখায় ফোলা। এসবই পৃথিবী তরল থাকাকালীন এর অক্ষীয় গতি থেকে উদ্ভুত কেন্দ্রাভিমুখী বলেরই ফলশ্রুতি।

   অত্র আয়াতে উল্লেখিত "এর গন্ডি চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করে এনেছি"  দ্বারা পৃথিবীর কেন্দ্রাভিমুখী বলেরই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। পৃথিবী কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনের ক্ষেত্রে এ বল একই বস্তু ও কেন্দ্রের ওপর কাজ করে থাকে।

   বিজ্ঞান এটি মাত্র তিন শতাব্দি পূর্বে প্রমাণ করেছে আর কোরাআন বলেছে বিজ্ঞানের বহু শতাব্দি আগে।
                              

یٰمعشر الجن والانس ان استطعتم ان تنفذوا من اقطار
السمٰوٰت والارض فانفذوا لاتنفذون الابسلطان-(۵۵-۳۳)

  " হে জিন ও মানব জাতি, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে অতিক্রম করো, কিন্তু পারবে না শক্তি ব্যতিরেকে।"  (সুরা ৫৫, আয়াতঃ ৩৩)

     বৈজ্ঞানিক শক্তি দ্বারা মহাকাশ ভ্রমণ এবং অভিযানের সম্ভাবনার প্রতি অত্র আয়াত ইঙ্গিত প্রদান করেছে আর কোরআনে এ বিষয়টির পূর্বাভাস দেয়ার ১৪০০ বছর পরে মানুষ  তা বুঝতে সক্ষম হয়েছে।

      আরবি (سلطان) 'সুলতান' শব্দের সমার্থক শব্দগুলোর অর্থ হলো, 'প্রমাণ, নির্দেশ, শক্তি, জ্ঞান!' তাই, অত্র আয়াত মনুষ্য জাতিকে এসব জগতের রহস্য আবিষ্কার করার প্রেরণা জোগায়, যে আবিস্কারের জ্ঞান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দেন যে, যদিও মহাকাশ অভিযান সম্ভব, তবে একাজের জন্যে বিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।
                        

الم تر ان الله يزجى ىسحابا ثم يؤلف بينه ثم  زكاما فترى الودق يخرج من خلاله وينزل من السماء من جبال فيها من برد فيصيب به من يشاء  يصرفه عن من  يشاء يكاد سنا برقه يجهب بالابصارـ ٢٤ـ٤٣

" তুমি কি দেখো না আল্লাহ মেঘমালাকে ধীর গতিতে সঞ্চালন করেন, তারপর তার খন্ডগুলোকে পরস্পর যুক্ত করেন, তারপর তাকে একত্র করে একটি ঘন মেঘে পরিণত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও, তার খোল থেকে বৃষ্টিবিন্দু একাধারে ঝরে পড়েছে আর তিনি আকাশ থেকে তার মধ্যে সমুন্নত পাহাড়গুলোর বদৌলতে শিলা বর্ষণ করেন, তারপর যাকে ইচ্ছা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ করেন এবং যাকে চান এর হাত থেকে বাঁচিয়ে নেন। তার বিদ্যুৎচমক চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।" ( সুরাঃ২৪, আয়াতঃ ৪৩)

অত্র আয়াতে লক্ষণীয় শব্দগুচ্ছ হচ্ছে, " তারপর তার খন্ডগুলোকে পরস্পর যুক্ত করেন।" এটি বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত একটি অন্যতম মূল তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে। এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত, এমনকি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক চার্জের মেঘকে একত্রিত করার একটি যথাযথ বিবরণ যা প্রায়শ আমাদের চোখে আলো হিসেবে প্রতিয়মান হয়।

বৃষ্টিপতনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমন্ডলীয় বিদ্যুৎ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের অপর একটি আয়াত থেকে আমরা সুস্পষ্ট ধারণা  পেয়ে থাকি, আয়াতটি হলো, 

وارسلنا الرياح لواقح فانزلنا من السماء ماء فاسقيناكموه وما انتم له بخازنين -١٥-٢٢

" এবং আমরা প্রেরণ করে থাকি নিষিক্তকারি বাতাস। তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে  তোমাদের পিপাসা মেটাই। এ সম্পদের ভান্ডার তোমাদের হাতে নেই।" ( সূরাঃ ১৫, আয়াতঃ ২২)। 

 এখানে " নিষিক্তকরন" মেঘ এবং অন্য কোনোটির মধ্যে ঘটে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আর এ নিষিক্তকরণের সাথে উদ্ভিদের পুরোপুরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। উভয়টির ক্ষেত্রে "নিষিক্তকরণ" একটি অপরটিকে  আকর্ষণ করে এমন দুটি অসম বস্তুর মিলনে গঠিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে উভয় জিনিস অদৃশ্য হয়ে যায় এবং এদের জায়গায় একটি নতুন জিনিস তৈরি হয়।   

পবিত্র সে সত্তা যিনি তার প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নাযিলকৃত পাক কালামের মধ্যে এটি ব্যক্ত করেছেন।

او كظلمات قى  بحر لجى يغشاه موج من فوقه موج من فوقه  سحاب ظلمات  بعضها فوق بعض  اذا اخرج يده لم يكد يراها و من لم يجعل الله نورا فما له  من نور  ـ ٢٤ ـ ٤٠

" অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন সে তা একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোনো জ্যোতিই নেই।" ( সূরাঃ ২৪- আয়াতঃ ৪০)।

       পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি উপকূলের নিকটস্থ অগভীর জলে নয়, " বিশাল গভীর" মহাসাগরের জলের আভ্যন্তরীণ তরঙ্গ এবং পৃষ্ঠ তরঙ্গের অস্তিত্বের  ঈঙ্গিত প্রদান করেছে। নবী মুহাম্মদ ( সা.) মহাসাগর তো দুরের কথা কখনো সমুদ্রও দেখেন নি এবং এগুলো ভ্রমণও করেন নি। সুতরাং মহাসাগরের গভীর জলের অভ্যন্তরে যে তরঙ্গ রয়েছে সে সম্পর্কীয় তথ্য সে যুগে তাঁর জানার কথা নয়। এটি অবশ্যই একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। পবিত্র কোরআন আল্লাহর বাণী বিধায় তিনি নবীর মাধ্যমে এ তথ্যটি প্রকাশ করিয়েছেন। এর অনেক পরে বিজ্ঞান কর্তৃক এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। জনৈক ইউরোপিয়ান নাবিক  উত্তাল সাগরের ভয়ঙ্কর জটিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণের এ অনুচ্ছেদটি পড়ে সাথে সাথে  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

 والارض بعد ذالك دحها- ٧٩ـ ٣٠ـ

" এর পর তিনি পৃথিবীকে উট পাখির ডিমের আকৃতির মতো  করেছেন"। (সূরাঃ ৭৯, আয়াতঃ ৩০)।

১৫১৯ সালে ম্যাগিলিয়ান পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমণ করে বাস্তবে প্রমাণ করেছিলেন যে পৃথিবী গোলাকার, কিন্তু তার বহু শতাব্দী পূর্বে পবিত্র কোরআন এ তথ্যটি প্রদান করেছে। অত্র আয়াতে পৃথিবীর আকৃতিকে ( دحها) উট পাখির  ডিমের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবী গোলাকার।

خلق السموات والارض بالحق يكو ر اليل على النهار ويكور النهار على اليل وسخر الشمس والقمر كل يجز ى لاجل مسمى الاهو العزيز الغفار  ٣٩ـ  ٠٥

" তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি দিনের প্রান্ত সীমায় রাতকে এবং রাতের প্রান্ত সীমায় দিনকে ( ঘুরপথে) জড়িয়ে দেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে এমনভাবে অনুগত করেছেন যে প্রত্যেকেই একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত গতিশীল থাকে। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। সূরাঃ  (৩৯- আয়াতঃ ০৫)।

   অত্র আয়াতে " তিনি দিনের প্রান্তসীমায় রাতকে এবং রাতের প্রান্তসীমায় দিনকে ( ঘুরপথে) জড়িয়ে দেন"-- বাক্যটি দ্বারা পৃথিবী যে গোলাকার তার প্রমাণ মেলে।

لاالشمس ينٌبغي لها ان تدرك القمر ولا اليل سابق النهار وكل فى فلك يسبحون ـــ ٣٦ ٤٠

" সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের। এরা আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। ( সূরাঃ ৩৯-আয়াতঃ ৪০)।"

 অত্র আয়াতে  (كل فى فلك يسبحون ) অর্থাৎ,  "প্রত্যেকে আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। "-- বাক্য দ্বারা চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তনকে বুঝায়। সূর্যের চারদিকে শুধু পৃথিবীর আবর্তনকে বুঝায় না। 

পৃথিবী যে গোলাকার তা পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে ইঙ্গিতে ব্যক্ত করা হয়েছে। কারণ, যে যুগে এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছিলো সে যুগের লোকদের বদ্ধমূল ধারণা ছিলো যে পৃথিবী একটা সমতলভূমি। এটি গোলাকার বলে মেনে নেয়ার মতো বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তাদের ছিলো না আর এর বিপরীতে পৃথিবীকে যদি  স্পষ্টভাবে গোলাকার উল্লেখ করা হতো তাহলে হয়তো তাদের ধরারণায় আঘাত আসতো এবং হয়তো তারা প্রচন্ডভাবে কোরআনের বিরোধিতা করতো।

                        *****

                     মানুষ

ايحسب الانسان الن نجمعه عظامه ـ بلى قادرين على ان نسوى بنا نه ــ ٧٥ ـ٤٠

"মানুষ কি মনে করে যে আমি তার হাড়সমুহ একত্র করতে পারবো না। কেনো পারবো না আমি তো তার আঙুলের জোড়গুলো পর্যন্ত ঠিকমত সুবিন্যস্ত করতে সক্ষম"-( আয়াতঃ ৭৫- সূরাঃ৪০)آ

অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, " মানুষ কি ভাবে যে, " মানুষের মৃত্যুর পরে ক্ষয়ে যাওয়া হাড়গুলোকে একত্র করে যথাস্থানে স্থাপন করে পুণরায় তার দেহ গঠন করতে আল্লাহ সক্ষম নন? হাড় কেনো? তিনি তো মৃত্যুর পরে মানুষের আঙুলের ডগাগুলোকে  একত্র করে যথাযথভাবে স্থাপন করে পুর্বে যেমন ছিল ঠিক তেমন রূপ দিয়ে গঠন করতে পারেন।"

এটি একটি লক্ষণীয় অলৌকিক ব্যাপার। কারণ, মানব দেহের অন্যান্য অঙ্গ থেকে আল্লাহ্ কেনো উপমার জন্যে মানুষের আঙুলকে বেছে নিলেন? অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যথা   চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা ইত্যাদি বিভিন্ন লোকের ক্ষেত্রে আকৃতিতে বৈসাদৃশ্য হয় না কিন্তু, প্রত্যেক ব্যাক্তির আঙুলের গঠন বা আকৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একজনের আঙুলের সাথে অপরজনের আঙুলের কখনো সাদৃশ্য বা মিল থাকবে না। আঙুলের এ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মানুষ প্রথম জানতে পারে ঊনবিংশ শতাব্দীতে, অর্থাৎ পবিত্র কোরআন নাযিলের ত্রয়োদশ শতাব্দী পরে। অপরাধীকে সনাক্ত করার জন্যে এ আঙুলের চাপ দ্বারা পুলিশকে সহযোগিতা করা হয়। অবশ্যই এ তথ্য মুহাম্মদ (সা.) নিজে আবিষ্কার করেন নি। পবিত্র কোরআন থেকে সবাই এটি জ্ঞাত হতে পেরেছে।

يا ايها الذين آمنوا اذا قمتم الى الصلواة فاغسلوا وجوهكم وايديكم الى المرافق ـ وامسحوا برءوسكم وارجلكم الى ا لكعبين ـ ٠٥ ـ٠٦

" হে ঈমানদারগন! যখন তোমরা নামাজের জন্যে প্রস্তুতি নাও তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং হাত দুটি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার উপর হাত বুলাও এবং পা দুটি গোড়ালি পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো।"-( রুকুঃ ০৫, আয়াতঃ ০৬)।

একজন মুসলিম কীভাবে নামাজের প্রস্তুতির পূর্বে পবিত্র হবেন সে বিষয়ে অত্র আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। ডাক্তার আবদুল আজিজ পাশা তার "ইসলাম এবং বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান" গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, দৈনিক পাঁচবার মুখমন্ডল ধৌতকরণ মুখ এবং দন্তকে রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করার একটি সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। নাকের ভেতরের গহ্বর ঠান্ডা পানি দ্বারা ধৌত করা হলে সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। নিয়মিত দৈনিক পাঁচবার মুখ, হাত, কান এবং পা ধৌত করা হলে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ ও জ্বালাপোড়া রোগ থেকে এগুলোকে রক্ষা করা যায়।

ولا تقربو الزنى انه كان فاحشة وساء سبيلا ـ ١٧ ـ ٣٢

" যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং জঘন্য পথ।" 

পাক কালামের এ আয়াত  যিনার বিরুদ্ধে কঠোর সাবধান বাণি ঘোষণা করেছে। , যিনা যেকোনো জাতির স্বাস্থ্য ও সমাজ জীবনকে আঘাত করে। বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে যে যিনার কারণে যে রোগ হয় তা মস্তিষ্ক দুর্বল করে, অন্ধত্ব ও প্যারালাইসিস হয় এবং বংশ পরম্পরায়  এসব রোগের বিস্তৃতি ঘটায়।

انما حرم عليكم الميتة و الدم و لحم الخنزير وما ا هل به لغير الله فمن اضطر غير  باغ ولا عاد فلا اثم عليه ان الله غفورالرحيم ـ ٢ ـ ١٧٣

" তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সে সব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয় অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমতাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু ৷ (সূরাঃ ২, আয়াতঃ ১৭৩)। 

বর্তমানে শুকরের মাংসের মারাত্মক ঝুঁকি আবিষ্কৃত হয়েছে। সেটি হলো এ মাংসের আঁশের ভেতর  ত্রিচেনেলা  (Trichenella) নামক এক প্রকার কৃমি থাকে যা সাধারণ রান্নায় মরে না। এ কৃমিগুলো শুকর মাংস ভক্ষণকারীদের অন্ত্রে (Irremediable diseases) অচিকিৎসনীয় রোগ ঘটায় যা দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে।

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান  আরো প্রমাণ করেছে যে, শুকর মাংশ ভক্ষণে আরো নানা প্রকার জটিল রোগ হয়ে থাকে। কারণ, এ মাংসে অন্যান্য প্রাণীর মাংসের চেয়ে প্রচুর পরিমাণ ইউরিক এসিড থাকে। অন্যান্য প্রাণীর বেশির ভাগ ইউরিক এসিড মূত্রত্যাগের সাথে চলে যায়। মানুষের মূত্রতাগে কিডনির সাহায্যে এটি নির্গত হয় নব্বই শতাংশ। অথচ, শুকরের মুত্রত্যাগে এটি নির্গত হয় মাত্র দুই শতাংশ। একারণে শুকর সব সময় বাত রোগে ভোগে থাকে। এ রোগটি এর মাংস ভক্ষণকারীদের দেহেও ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, শুকর অপরিচ্ছন্ন ও দূষিত খাদ্য খায় যা তার মাংসকে দূষিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল ইনিস্টিটিউটের একটি বিবরণীতে দেখা যায়, শুকরের মাংশে কৃমি থাকার কারণে ওই মাংস ভক্ষকদের মৃত্যুর হার ৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে থাকে। 

আয়াতটিতে রক্তকে খাদ্য হিসেবে বারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ তখন অজ্ঞ ছিল। কিন্তু বর্তমানে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষ নিশ্চিত হতে পেরেছে যে এতে প্রচুর পরিমাণ ইউরিক এসিড রয়েছে যা খুবই বিষাক্ত উপাদান।

অত্র আয়াতের আরেকটি অন্যতম বিস্ময় হলো হালাল পশুর মাংস খাওয়ার পূর্বে একে "জবাই" করার নির্দেশ দেয়া। ইসলাম ধর্মে পশু জবাই করার ব্যাপারে একটি নির্ধারিত বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, যে পদ্ধতিতে পশুর গাঢ়ের সব রগ না কেটে মাত্র কয়েকটি মূল রগ কেটে দেয়া, যাতে হৃতপিন্ড এবং মস্তিষ্কের সম্পর্ক ছিন্ন না হয়। এতে পশুর মৃত্যুর সাথে সাথে এর দেহের সকল শিরা উপশিরায় রক্ত জমাট না হয়ে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যায় এবং ওই মাংস ভক্ষণে খাদকের কোনো ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে সকল শিরা উপশিরায় রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় যে পশু মারা যায় ওই পশুর মাংস ভক্ষণ করলে খাদকের মারাত্মক ক্ষতির কারণ ঘটে।

অত্র আয়াতে আরেকটি নিষেধাজ্ঞা হলো, যে প্রাণী নিজে নিজে মারা যায় ওই প্রাণীর মাংস না খাওয়া। বিজ্ঞ চিকিৎসকগণের মতে, যে পশু এমনিতে মারা যায়, ওই পশুর মাংসের প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদানগুলো হারিয়ে যায়। যার ফলে, ওই মাংস ভক্ষণে পাকস্থলী এবং অন্ত্রে তীব্র শূলবেদনাদায়ক রোগের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ রাখা হলে তা পচন ধরে এবং মারাত্মকভাবে বিষাক্ত হয়, যা একজন মানুষের হৃদপিন্ড অচল করে, প্যারালাইসিস ও বন্ধ্যত্ব ঘটায় এবং তাকে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।

প্রিয় মুক্তমনা পাঠক,  পবিত্র কোরআনের এসব বিস্ময়কর তথ্য জেনে আপনি কি  অবাক হন নি  যেগুলো বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারে বহু শতাব্দী পূর্বে আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন? 

و يسءلونك  عن المحيض قل هو اذى فاعتزلواالنساء فى المحيض ولا تقربوهن حتى يطهرة  فاذا ت‍طهرن فاتوهن من حيث امركم الله ان الله يحب التوابين و يحب المتطهرين-٢-٢٢٢ 

"তারা আপনাকে হায়েজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে, আপনি বলে দিন সেটি একটি অশুচি ও অপরিচ্ছন্ন  অবস্থা। এ সময় তোমরা স্ত্রীদের থেকে দূরে থেকো এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের ধারে কাছেও যেয়ো  না। তারপর তারা যখন পাক-পবিত্র হবে, তখন  তাদের ধারে কাছে যাবে, যেভাবে যাওয়ার জন্যে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকেন এবং পবিত্রতা অবলম্বন করেন।"  (সূরাঃ২ আয়াতঃ ২২২)।

ঋতুস্রাবের সময় স্ত্রীদের কাছে অভিগমনের ব্যাপারে অত্র আয়াতে পুরুষদেরকে সাবধান করে দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান চিকিৎসাবিদগণও কোরআনের এ সাবধান বাণীর সাথে একমত। কারণ, মাসিক চলাকালীন সময়ে নারীদের যৌনাঙ্গ সংকুচিত থাকে। এমতবস্থায় যৌন মিলনে নারীদের যৌনাঙ্গে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, অধিক রক্তক্ষরণ হয় এবং যৌনাঙ্গ ফুলে যায়। এজাতীয় যৌন মিলন নারী-পুরুষ উভয়ের মানসিক উন্মাদনার একটা নিকৃষ্ট নিন্দনীয় কাজ বলে বিবেচিত।

পুরুষের ক্ষেত্রে যা ঘটে তা হলো, তার পুরুষাঙ্গ ফুলে যায়, জ্বালাতন করে এবং ক্ষত হয়। বিশেষ করে এ ক্ষত হয়ে থাকে মুত্র থলেতে, কোনো কোনো সময় এটি মুত্র থলে, মুত্রনালী এবং কিডনিতে হয়ে থাকে। এর কারণ হলো পুরুষের বীর্য নারীর মাসিকের রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়ে মারাত্মক দূষণ হয় আর যদি এ অবস্থায় নারীর গর্ভাশয়ে ভ্রুণের সঞ্চার হয়, তাহলে ওই ভ্রুণ থেকে শারিরীক এবং মানসিকভাবে দুর্বল শিশু জন্ম নেয়।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ নারীদের মাসিকের সময় পুরুষদেরকে দৈহিক মিলনের ব্যাপারে যে সাবধান বাণী দিয়েছেন সেটির সাথে একমত পোষণ  করেছেন। সুতরাং কোনো নিরপেক্ষ এবং মুক্ত চিন্তার অধিকারী লোক একথা অস্বীকার  করতে পারবে না যে চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে মুহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ গ্রন্থ আল-কোরআন আল্লাহর বাণী যা তার আশীর্বাদ স্বরূপ মানব জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছে। 

فليوم ننجيك ببدنك لتكون لمن خلفك اية و ان كثيرا من الناس عن اياتها لغافلون -١٠ -٩٢

" অতএব, আজকের দিনে আমি বাঁচিয়ে দিচ্ছি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্যে নিদর্শন হতে পারে আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহা শক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।" (সুরাঃ১০, আয়াতঃ৯২)।

অত্র আয়াত দ্বারা মিশরের ফেরাউনের   লাশের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যে ফেরাউনের যুগে আল্লাহ হযরত মুসা নবীকে প্রেরণ করেছিলেন, সে নবীর লাশ পৃথীবিতে আল্লাহ বিদ্যমান রাখেন নি। ফেরাউন মহাপাপী ছিল বিধায় তার লাশটাকে পরবর্তিদের শিক্ষণীয় নিদর্শনের জন্যে রক্ষা করবেন বলে আল্লাহ যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সত্যই প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি তার মৃত দেহ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং বিশ্ববাসী তা দেখতে পাচ্ছে। কোরআনের এ বিস্ময়কর ঘটনাটি পড়ে অনেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।

واذا قلتم يا موسى لن  نصبر على طعام واحد  فدعو لنا ربك يخرج لنا مما تنبت الارض من بقلها وقثاءها و فومها و عدثها وبصالها قال اتستبدلون الذى هوادنى بالذى هوا خير اهبطوا مصرا فان لكم ما ساءلتم وضربت عليهم الذلة والمسكنة وباءو بغضب  من الله ذالك بانهم كانوا يكفرون بايات  الله ويقتلون النبين بغيرالحق ذالك  بما عصو ا وكانو يعتدون ـ ٢ ـ ٦١

" আর তোমরা যখন বললে, হে মুসা, আমরা একই ধরণের খাবারে কখনো ধৈর্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা করো। তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা যমিতে উৎপন্ন হয। তরকরী, কাকড়ী, গম, মসূরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মুসা (আ.) বললেন, তোমরা কি একটি উৎকৃষ্ট বস্তুর পরিবর্তে নিকৃষ্ট বস্তু নিতে চাও? তাহলে তোমরা কোনো নগরীতে গিয়ে বসবাস করো, তোমরা যা কিছু চাও সেখানে তা পেয়ে যাবে। অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছালো, যার ফলে লাঞ্চনা, অধঃপতন, দূরাবস্থা ও অনটন তাদের উপর চেপে বসলো। এবং আল্লাহর গযব তাদেরকে ঘিরে ফেললো। এমন হলো এজন্যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান, সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরাঃ ২, আয়াতঃ ৬১)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে লতাগুল্ম, মসুর, পিঁয়াজ ইত্যাদি মান্না ( এক প্রকার মধু) এবং কোয়াইল ( এক প্রকার পাখি যেটির মাংস খুবই সুস্বাদু) এর  চেয়ে কম পুষ্টিকর। এসব খাবার হজরত মুসা (আ.) এর যুগের লোকেরা ভক্ষণ করতো। 

তবে বর্তমানে পুষ্টি গবেষণা উন্নত হওয়ায় এই আয়াতে উল্লিখিত তথ্যগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কেবলমাত্র বিজ্ঞানই আবিষ্কার করেছে যে, কোনও খাবারের সেরা মান এর  পুষ্টিকর উপাদানগুলোর পরিমাণের  মধ্যে নিহিত থাকে না; নিহিত থাকে এর উপাদানগুলোর গুণগত মানের মধ্যে।

ইংল্যান্ডের গবেষণা বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি বুলেটিন ছাপিয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, দেহের পুড়ে যাওয়া টিস্যুগুলোর ক্ষতিপূরণে প্রোটিনের ধরন এবং সামর্থ অনুযায়ী এর মানের ভিন্নতা হয়।

অপর গুরুত্বপূর্ণ  তথ্যটি হলো, "গাছড়া বা ঔষধি" এটি ক্ষতিকর হয় বিশেষকরে শিশুদের বেলায়, যদি তা পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়।

বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষকে শক্তির উৎস হিসেবে 'কার্বোহাইড্রেট" (মান্না) এর ওপর নির্ভরশীল থাকার উপদেশ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও উদ্ভিদের মধ্যে বিদ্যমান প্রোটিনের চেয়ে প্রাণির দেহের প্রোটিন অনেক সমৃদ্ধ বলেও তাঁরা গবেষনায় দেখতে পান।  

এখানে আরো লক্ষণীয় যে, মহাগ্রন্থ আল কোরআনের অত্র আয়াতে উল্লিখিত উদ্ভিদগুলোর প্রোটিন অন্যান্য উদ্ভিদগুলোর চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। এ গুলোর চেয়ে আরো বেশি সমৃদ্ধ " মান্না" এবং "কোয়াইল " এর প্রোটিন।

সুতরাং, পবিত্র কোরআন আধুনিক বিজ্ঞানের বহু শতাব্দি পূর্বে এসব তথ্যের ইঙ্গিত প্রদান করেছে। 

                       *****

                  ভ্রূণের রহস্য

لقد خلقنا الانسان فى احسن تقويم ـ ٩٥ ـ٤

" আমি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে সৃষ্টি করেছি। (" সূরাঃ ৯৫, আয়াত ০৪)।

ولقد كرمنا بنى ءادم وحملناهم فى البر والبحر ورزقناهم من الطيبات وفضلناهم  على  ممن خلقنا تفضيلاــ١٧ـ ٧٠

" নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।" ( সূরাঃ ১৭, আয়াতঃ ৭০)।

والله خلق كل دابة من ماء فمنهم من يمشى على بطنه ومنهم من يمشى رجلين ومنهم من يمشى على اربع     يخلق الله ما يشاء ان الله على كل شي قدير- ٢٤-٤٥

" আল্লাহহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভর দিয়ে চলে ; কতক দুপায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পয়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ্ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সব কিছু করতে সক্ষম। " (সূরাঃ ১৭, আয়াতঃ৭০)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ মানুষকে মর্যাদা দান করেছেন এবং তাকে উচ্চ মানসিক গুণমান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিবর্তনবাদের সূচনাকারী ডারউইন এবং লামার্কের মতবাদ প্রত্যাখ্যাত হয় এ আয়াতের মাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে যে, সব প্রজাতির প্রাণীকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাহোক, ডারউইন বিশ্বাস করতেন যে, বিবর্তন স্রষ্টা কর্তৃক ঘটে থাকে। 

বিবর্তন মতবাদ দীর্ঘকাল ধরে তাদের নিকট বিবেচিত ছিল, যারা অজ্ঞতায় নিমজ্জিত  এবং ভুল পথে পরিচালিত হয়ে ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী এবং র্স্বয়ং সৃষ্টিতে বিশ্বাসী ছিল।

আধুনিককালের মহাবিজ্ঞানীগণের নিকট এটি ভ্রান্ত মতবাদ বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং কোরআনে উল্লিখিত সৃষ্টিতত্বটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে। 

সুইডেনের পরমাণু বিজ্ঞানী জোহান হর্থার (Johan Horther) ১৯৫৬ সালে একটি বিবরণী প্রকাশ করেন। ওই বিবরণীতে তিনি ডারউইন মতবাদের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মানুষ যে বানরের বংশধর এ প্রমাণ পৃথিবীতে কেউ দিতে পারবে না। তিনি এ বিষয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখিয়েছেন যে, মানুষ বানর থেকে অনেক ভিন্ন প্রকৃতির প্রাণী হিসেবে কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করে আসছে।

তিনি বলেন যে, মানবদেহের যে কঙ্কাল নিয়ে তিনি গবেষণা করেন, সেটির ওপর ভিত্তি করে তিনি তার নিজস্ব মতবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল শহরের জাদুঘরে  মানুষের চোয়াল ধারণকৃত একখণ্ড কয়লা দান করেন। সে কয়লা খণ্ডটি প্রায় দশ মিলিয়ন বছরের পুরাতন বলে ধারণা করা হয়। 

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণার সুপারভাউজার ড.ডৌটারও জোহান হর্থারের ধারনাটি সমর্থন করেন এবং বলেন যে, ডারুইনের মতবাদের ভিত্তি বা প্রমাণ নেই বিধায় কোনো অবস্থাতে তা সমর্থন করা যায় না। তিনি আরো বলেন যে, সব জীবন্ত প্রাণী সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে সৃষ্টি হয়। প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি হলো মানুষ যা দুপায়ে নির্ভর কর চলে। অন্যান্য প্রজাতি চার পায়ে  ভর করে চলে, আবার সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণী চলে পেঠে ভর করে যা পবিত্র কোরআনের  উপর্যুক্ত  আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।

অধ্যাপক ডি কোয়াট্রি ফেইজ বলেন যে, মানুষ এবং বানরের মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই। কারণ  আমাদের আকৃতির সাথে চতুর্থ প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মিল পাওয়া গিয়েছে, যদিও তার পূর্বপুরুষ বানরের সাথে তার আকৃতির মিল রয়েছে বলে দাবি করা হয়।

তারপর তিনি বলেন, বানর এবং অন্য যেকোনো প্রাণী থেকে মানুষের ক্রমবিকাশকে আমরা বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না।

خلق الانسان من صلصال كاالفخار ـ٥٥ـ ١٤

" তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। 

ومن ايته ان خلقكم من تراب ثم اذا انتم بشر تنتشرون ـ٣٠ ـ ٢٠

" তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এ যে, তিনি মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।তারপর তোমরা মানুষ হয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।' ( সূরাঃ ৩০, আয়াতঃ ২০)। 

" অত্র আয়াত দ্বয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। বর্তমান বিজ্ঞানীগণ মাটি এবং মানবদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কোরআনের এ কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা দেখতে পান যে উভয়টি একই প্রকার কতিপয় উপাদানে গঠিত আর সে উপাদানগুলো হলো; কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, সোডিয়াম, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার,আয়োডিন, কোবাল্ট, জিংক,আ্যলুমিনিয়াম, ফ্লোরিন এবং সিলিকন। 

انا خلقناالانسان من نطفة امشاج نبتليه فجعلناه سميعا بصيرا ـ ٥٥ ـ ٠٢

" আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে যাতে তার পরীক্ষা নিতে পারি। এ উদ্দেশ্যে আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী করেছি।"( সূরাঃ ৫৫, আয়াতঃ ২)।

অত্র আয়াতে মিশ্র শুক্রবিন্দুর' কথা বলা হয়েছে এজন্যে যে, স্ত্রী গর্ভে শুধু পুরুষের শুক্রাণুতে ভ্রূণের সৃষ্টি হয় না, এর জন্যে  স্ত্রীর ডিম্বাণুরও  প্রয়োজন হয়। তাই " মিশ্র শুক্রবিন্দু" বলতে পুরুষের "শুক্রাণু" এবং নারীর "ডিম্বাণু" উভয়টির মিশ্রণকে বোঝানো হয়েছে।

শুক্রানু ও ডিম্বানু সম্পর্কীয় এ  তথ্যটি বিজ্ঞান সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে। 

يخلقكم من بطون امهاتكم خلقا من بعد خلق فى ظلمات ثلث  ـ٣٩ـ ٠٦

" তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভে তিন তিনটে অন্ধকার পর্দার অভ্যন্তরে একের পর এক আকৃতি দান করে থাকেন।" ( সূরাঃ ৩৯, আয়াতঃ ০৬)

وقد خلقكم اتوارا ـ ٧١ ـ ١٤

"অথচ তিনি তেমাদের পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন।" ( সূরাঃ ৭১, আয়াতঃ ১৪)।

এ দু'টি আয়াত দ্বারা দু'টি বিস্মযকর রহস্য যথা; দেহব্যবচ্ছেদ ও ভ্রূণতত্বকে বোঝানো হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্প্রতি এ  দু'টির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

ভ্রুণবিজ্ঞানীগণ বলেন যে, জরায়ুতে গঠন প্রক্রিয়ার  শুরুতে ভ্রূণকে  এককোষী প্রাণীর মত দেখায়; তারপর গর্ভাগ্রগতির ফলে এটি বহুকোষী প্রাণীর মতো হয়; এরপর জলজ প্রাণীর আকৃতি ধারণ করে; তারপর স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সর্বশেষে মানব আকৃতি ধারণ করে ভূমিষ্ট হয়।

 ভ্রুণবিজ্ঞানী মার্গারেট গিলবার্ট তার " The Story of the Embryo" গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রূণ তিনটি মজবুত ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত থাকে যেখানে পানি, আলো ও তাপ প্রবেশ করতে পারে না। 

এখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যে তিনটি ঝিল্লির কথা বলা হয়েছে সে তিনটি ঝিল্লিকে অত্র আয়াতে " তিনটি অন্ধকারের পর্দা" বলা হয়েছে। এ তিনটি অন্ধকারের পর্দার ভেতরে আলো, তাপ এবং জল অনুপ্রবিষ্ট। 

চিকিৎসা বিজ্ঞাণ এসব তথ্য সম্প্রতি আবিষ্কার করেছ মাত্র, আর এগুলো সম্পর্কে পাক কোরআনে বহু পর্বে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সুতরাং, কোরআন যে আল্লাহর বাণী তাতে কোনো সন্দেহ আছে?

 لله ملك السماوات والارض يخلق ما  يشاء يهب لمن يشاء اناثا ويهب لمن يشاء الذكور ـ ٤٦ـ ٤٩

" নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ্ তা'লারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান, এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।" ( সূরাঃ ৪২ ,  আয়াতঃ ৪৯)।

ان الله عنده علم  وينزل الغيث و يعلم ما في  الارحام و ما تدري نفس ما ذا تكسب غدا وما تدرى نفس باى ارض تموت ان الله عليم خبيرـ ٣١ـ  ٣٤

" নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।" ( সূরাঃ ৩১,  আয়াতঃ ৩৪)।

বিজ্ঞানীগণ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করার জন্যে বার বার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে অসফল হন। অবশেষে নিশ্চিতভাবে আবিস্কার করেন যে ভ্রুণের লিঙ্গ এমন এক মহাশক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয় যা মানুষের সম্ভাবনায় তো দূরের কথা, কল্পনায়ও থাকতে পারে না। কারণ, যৌন মিলনের সময় পুরুষের নির্গত বীর্যে দুশত কোটির মতো শুক্রাণু সন্তরণ করে  থাকে। তন্মধ্যে মাত্র একটি শুক্রাণু নারীর যোনিপথ দিয়ে অতি দ্রুত ডিম্ববাহী  নালীতে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে মাত্র একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় এবং এতে ভ্রূণের সৃস্টি হয়। তাহলে কীভাবে বিজ্ঞান ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্যে এতগুলো প্রাণীকোষ থেকে মাত্র একটি পছন্দনীয় কোষ নির্বাচন করে  সেটি অতি দ্রুত অন্যান্য অসংখ্য কোষের পূর্বে ডিম্ব নালীতে পৌঁছাতে পারবে?  কোনো অবস্থাতে তা সম্ভব নয়। কারণ, ভ্রূণের লিঙ্গের নিয়ন্ত্রণ থাকে একমাত্র আল্লাহর হাতে। 

কালের পরিক্রমায় বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হোক না কেন, পবিত্র কোরআনের এ সব কথা চিরস্থায়ীভাবে অলৌকিক হয়ে থাকবে।  

দ্বিতীয় আয়াত দ্বারা এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, গর্ভস্থিত ভ্রূণের লিঙ্গ সম্পর্কে আল্লাহ্ ছাড়া কেউ কখনো কিছুই জানতে পারবে না। এ ব্যাপারে অগ্রিম কিছু বলাও কারো পক্ষে সম্ভব হবে না।

ভ্রূণের লিঙ্গ সম্পর্কে অগ্রিম বলার ব্যাপরে বিজ্ঞানীগণ লেন্স এবং রস্মির সাহয্যে বার বার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে ব্যর্থ হন।

উপর্যুক্ত আয়াতগুলোতে বর্ণিত তথ্যাদি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাগ্রন্থ আলকোরআন আল্লাহর বাণী। এটি মানুষের রচিত কোনো গ্রন্থ নয়।

ولقد خلقناالانسان من سللة من طين ـ ثم جعلناه نطفة فى قرار مكن ـ ثم خلقناالنطفة علقة فخلقناالعلقة مضغة فقلنا المضغة عظاما فكسوناالعظام لحما ثم انشآنه خلقا اخرـ فتبارك الله احسن الخالقين  ـ٢٣,  ١٢ -١٤

" আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি, এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সে মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে  তাকে আমি নতুনরূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কতই কল্যাণময়।" ( সূরাঃ২৩, আয়াতঃ১২- ১৪)।

অত্র আয়াতগুলোতে ভ্রূণের বিভিন্ন স্তরে বেড়ে ওঠার বিবরণ রয়েছে। জন্মের পূর্বে ভ্রূণ গর্ভাশয়ে প্রথমে শুক্রাণু থেকে রক্তপিন্ডু' এর থেকে মাংসপিন্ডু, তারপর এর থেকে অস্থি, যেটি পরে মাংস দ্বারা আবৃত হয়, এরপর, এর ভেতর মানব আত্মা প্রদান করা হয়। ভ্রূণ সৃষ্টির এ স্তরগুলো  আধুনিক শরীরতত্ববিদগণের গবেষণায় সম্পুর্ণ  সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।  

অত্র আয়াতে " নিরাপদ আবাস " দ্বারা গর্ভাশয়ে আল্লাহর দয়ায় ভ্রূণকে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে বিস্ময়কর  প্রতিরক্ষামূলক কর্ম এবং সাবধানতার ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

গর্ভাশয়ে ভ্রূণ এক প্রকার তরল পদার্থ দ্বারা বেষ্টিত থাকে যা অভিঘাতকে নিঃশেষিত  করে। একে নাভিনালের মাধ্যমে তার মায়ের রক্ত পান করানো হয়।গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে অনেক গ্রন্থি রস প্রদান করে যা গর্ভাশয়ের মাংসপেশিকে সঙ্কুচিত এবং শিথিল করতেে সহায়তা করে। অন্যান্য গ্রন্থির নিঃসরিত রস গর্ভাশয় থেকে ভ্রূণকে পিছলে পড়া থেকে রক্ষা করে।

যদি আমরা শরীর বিদ্যায় নারীদের তলপেঠের নিম্নাংশের গর্ভাশয় এবং এর নিরাপদ অবস্থান সম্পর্কে অধ্যয়ন করি তাহলে দেখতে পাই সে গাঢ় প্রশস্ত পার্শ্বযুক্ত আধারটি। এরপর উদরের আবরক ঝিল্লির অংশ হিসেবে অনেকগুলো প্রশস্ত ও গোলাকার তন্ত্রী দেখতে পাই যেগুলো এ আধারকে মুত্রথলে এবং মলদ্বারের সাথে ধরে রাখে। এসবগুলো গর্ভাশয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং গর্ভধারনের অগ্রগতির ফলে গর্ভাশয় ফুলে পড়ে যাওয়া অথবা গর্ভস্থিত ভ্রূণের মোড় পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে গর্ভাশয়কে রক্ষা করে থাকে এবং প্রসবের পরে এ তন্ত্রীগুলো ধীরে ধীরে এদের প্রাকৃতিক দৈর্ঘে সঙ্কুচিত হয়।

এগুলো অধ্যয়ন করে যদি আমরা শ্রোণী এবং এর হাড়গুলোর গঠন সম্পর্কে জ্ঞাত হই, তাহলে অত্র আয়াতে উল্লিখিত আল্লাহর বাণী " সংরক্ষিত আধার" এর বর্ণনার সত্যতা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে সক্ষম হবো।

اقرا باسم ربك الذى خلق ـ خلق الانسان من علق ـ ٩٦ـ-١-٢

" পাঠ করুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে একটি জোঁক থেকে।"     (সূরাঃ ৯৬, আয়াতঃ ০১-০২)। 

বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে য, মানুষের বীর্যে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অসংখ্য শুক্রাণু রয়েছে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলোর রয়েছে একটি মাথা, ঘাড় এবং লেজ। এগুলো দেখতে জুঁকের মতো। জুঁক আর মানব বীর্যের এ শুক্রাণুগুলোর মধ্যে অপর কতিপয় মিলও রয়েছে; জুঁক পানিতে সাঁতার কাটে আর মানব বীর্যের শুক্রাণুগুলো মানুষের বীর্যের মধ্যে সাঁতার কাটে। একটি জোঁক কোনো জীবন্ত প্রাণীকে পেলে আঁকড়ে ধরে তার রক্ত চোষণ করে। পক্ষান্তরে একটি শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণুকে আঁকড়িয়ে ধরে জরায়ুর দেয়ালের সাথে জুঁকের মতো লেগে থাকে এবং এর খাদ্য হিসেবে নারীর রক্ত চোষণ করে। তাই, পবিত্র কোরআনে মানুষের শুক্রাণুকে  " علق"  অর্থাৎ  "একটি জুুঁক" বলা হয়েছে।

একজন পুরুষের প্রতিটি যৌন মিলনে বীর্যপাতে ২০০ মিলিয়ন শুক্রাণু নিঃসৃত হয়, যেগুলো বহু মিলিয়ন মহিলাকে গর্ভবতী করাতে যথেষ্ট। তন্মধ্যে নারীগর্ভে পুরুষের মাত্র একটি শুক্রাণুর সাহয়্যে (যা একটি ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে) একটি নারী গর্ভবতী হয়ে থাকে। মহান আল্লাহর কী যে বিস্ময়কর অসীম ক্ষমতা রয়েছে তা এর দ্বারা প্রতিয়মান হয়।

বর্তমান বিজ্ঞান ১৯৫০ সালে মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের পরে এসব তথ্য আবিষ্কার করেছে, অথচ মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর এ বাণী প্রচার করেন সপ্তম শতাব্দীতে। সুতরাং, যে কোনো নিরপেক্ষ চিন্তাশীল ব্যক্তি প্রশ্ন করতে পারেন, কে সে যুগে মুহাম্মদ (সা.) কে এসব তথ্যের শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে যুগে লোকজন মানুষের বীর্যকে তরল পদার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝতো না এবং তা বুঝার মত কোনো জ্ঞানও তাদের ছিলো না।

                      *****

       √√√     প্রাণীদের রহস্য

يخرج من بطونها شراب مختلف الوانه فيه شفاء للناس - ان فى ذالك  لآية لقوم يتفكرون ـ ١٦ ـ٦٩ـ 

" তার ভেতর থেকে বিচিত্র রঙের পানীয় নির্গত হয। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।" ( আয়াতঃ ১৬, সূরাঃ ৬৯)।

অত্র আয়াতে মধুর রোগ প্রতিকারের বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানও পবিত্র কোরআনের এ বাণী  সমর্থন করে। চিকিৎসাবিদগণ বলেন, মধুতে মানবদেহের জন্যে উপকারী যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলো হলো; গ্লুকোজ, ফ্রাক্টোজ, সুক্রোজ , ডেক্মট্রিন, প্রোটিন, নাইট্রোজেন, ফরমিক এসিড, আইরন, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, সালফার, ম্যাগনাসিয়াম, ফসফরিক এসিড, পোলিন পাউডার, পারফিউম এবং আরো অন্যান্য নাম না জানা উপাদান। ঔষধ তৈরিতে মধু সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

আয়াতটিতে " তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার " এ বাণী দ্বারা মহান আল্লাহ এসব উপকারিতার কথা সংক্ষেপে ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি বিজ্ঞান কর্তৃক মধুর এসব গুণাগুণ আবিস্কৃত হয়েছে। সুতরাং এতো যুক্তি প্রমাণের পরেও কেউ কি বলতে পারবে যে কোরআন মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক লিখিত একটি গ্রন্থ?

  حتى اذا اتوا على واد النمل قا لت نملة يا ايها النمل ادخلوا مساكنكم لا يحطمنكم سليمان وجوده وهم لا يشعرون ـ  ٢٧ -١٨

  " যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছলো, তখন এক পিপীলিকা বললো, হে পিপিলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো। অন্যথায় সোলাইমান এবং তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিশে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না।" ( সূরা ২৭, আয়াতঃ ১৮)।

وما من دابة ف الارض ولا طاءر يطير بجنا حيه الا امم امثالكم ما فرطنا فى الكتاب من شيء ثم  الى ربهم يحشرون ـ ٦ ـ ٣٨ ـ 

" আর যতো প্রকার  প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যতো প্রকার পাখি দুডানা যোগে উড়ে বেড়ায় সবই তোমাদের মতো একেকটি শ্রেণি। আমি তাদের ভাগ্যলিপিতে কোনো কিছু লিখতে বাদ দিইনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।" 

অত্র আয়াতে মহান আল্লাহ শ্রেণিবদ্ধ মানুষ বা জাতির মতো প্রাণিদের দল বা শ্রেণির কথা বলেছেন। প্রাণিরাও যে শ্রেণিবদ্ধ তা বর্তমান প্রাৃণিবিদ্যাবিশারদগণ কর্তৃক সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তারা বলেন যে, প্রাণিদের মধ্যে সামাজিক  আবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং অনেকগুলোর মধ্যে রাজত্বও আছে। এরা সমাজের মত কতিপয় সৃঙ্খলার বশিভূত থাকে। যেমন, মৌমাছি এবং পিপীলিকা। এদের নিজস্ব ভাষা আছে। এরা একে অপরকে বুঝতে পারে।

একদা একজন প্রাণিবিদ দেখলেন যে, একটি পিপিলিকা একটা গর্ত থেকে একাকী বেরিয়ে এলো। গর্ত থেকে বেরিয়ে পিপিলিকাটি মাটিতে উড়তে অক্ষম একটা মাছি দেখতে পেলো। মাছিটিকে এর গর্তে নেয়ার জন্যে এটি প্রানপণ চেষ্টা করলো। বিশ মিনিট ধরে চলেছিলো মাছিটির সাথে এর সংগ্রাম। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে এটি এর গর্তে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এটি দশটি পিপিলিকা সঙ্গে করে গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো। এরা সম্মিলিতভাবে মাছিটির ওপর হামলে পড়ে  একে ছিঁড়ে দশ টুকরো করলো। পরে প্রত্যেকে একটি করে টুকরো গর্তে নিয়ে গেলো।

ঘটনাটি দেখে প্রাণিবিদ অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, পিপিলিকাটি কীভাবে এর সাথীদেরকে বুঝাতে পারলো যে এদের সাহায্য এর খুবই প্রয়োজন ছিল। যার ফলে এটি এর সাথীদেরকে গর্ত থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল? অবশেষে তিনি নিশ্চিত হলেন যে, পিপিলিকাদের বিশেষ ভাষা রয়েছে যার সাহায্যে এরা একে অপরকে বুঝাতে সক্ষম হয়।

তাহলে ভালো কথা, বর্তমান প্রাণিবিদগণ কর্তৃক এসব তথ্য আবিষ্কারের বহু শতাব্দি পুর্বে মুহাম্মদ (সা.) কে এসব তথ্য সম্পর্কে কে বলেছিলেন? অবশ্যই সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁকে এসব তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত করিয়েছিলেন।

  و ان لكم فى الانعام لعبرة نسقيكم مما فى بطونه من  بين فرث و دم لبنا خالصا سابغا للشاربين ـ ١٦ ـ ٦٦ـ

" তোমাদের জন্য  চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে মল ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।"  (সূরাঃ ১৬, আয়াতঃ৬৬)।

অত্র আয়াতে আল্লাহ চতুস্পদ জন্তুদের হজমের দীর্ঘ প্রক্রিয়াগুলোর প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদের খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে এ প্রক্রিয়াগুলো আরম্ভ হয় এবং বহু স্তর ও অঙ্গ যেগুলো খাদ্যকে দুধে পরিণত করার ব্যপারে সহায়তা করে সেগুলোর মধ্য দিয়ে খাদ্যরস অতিবাহিত হয়ে দুুুুধে পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়।

কোরআন যাদের নিকট অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের ভাষায় আল্লাহ কোরআনে তাদের অজানা গোপন রহস্য প্রকাশ করেছেন।

তারা হজম প্রক্রিয়া, এর বিভিন্ন অংশ, খাদ্যের  গতিপথ গহণ  এবং ছিবড়া ও রক্তের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পানীয় দুগ্ধ নিষ্কাসিত-হওয়া পর্যন্ত যে হজম প্রক্রিয়া চলে, এসব তথ্য সম্পর্কে  কিছুই জানতো না।

অত্র আয়াতে রক্তের পূর্বে মলের কথা উল্লিখিত আছে। কারণ খাদ্য পাকস্থলীতে প্রথমে মল এর পর রক্তে পরিণত হয়।

অতএব, পাক কোরআন যে আল্লাহর বাণি এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

فجعله غثاء احوى ـ ٨٧ ـ ٠٥ ـ

" অতঃপর, তাদেরকে কালো আবর্জনায় পরিণত করেছেন।" ( সূরা ৮৭, আয়াতঃ ০৫)।"

 অত্র আয়াতে 'কালো আবর্জনা' বলতে মাটি চাপা পড়া উদ্ভিদকে বুঝানো হয়েছে, যা সময়ের আবর্তনে  কালো রঙে পরিণত এবং পাথুরে হয়ে গিয়েছে। এর দ্বারা কয়লার উৎসের প্রতিও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মাটি চাপা পড়া উদ্ভিদ থেকে কয়লার সৃষ্টি বলে সাম্প্রতিক আবিষ্কারে প্রমাণিত হয়েছে।

وارسالناالرياح لواقح فانزلنا من السماء ماء فاسقيناكموه وما انتم له بخازنين ـ ١٥ ـ ٢٢ ـ 

" বৃষ্টিবাহী বায়ু আমি প্রেরণ করি। তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদের পিপাসা মিটাই। এ সম্পদের ভান্ডার তেমাদের হাতে নেই।" ( সূরাঃ ১৫, আয়াতঃ ২২)।

আধুনিক বিজ্ঞান  সম্প্রতি প্রমাণ করেছে যে, বায়ু  মেঘমালা এবং পুষ্পরাজিকে নিষিক্ত করে আর এ তথ্যটি উপর্যুক্ত আয়াতে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

বায়ু মেঘমালাকে নিষিক্ত করার জন্যে ধনাত্মক চার্জযুক্ত মেঘকে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত মেঘের সাথে সংযুক্ত করতে সহায়তা করে যা বৈদ্যুতিক প্রবাহ এবং বৃষ্টিপাত ঘটানোর অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। এটি আলোক সজ্জার ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে যা দুটি বৈদ্যুতিক তারের মধ্যে পারস্পরিক স্পর্শে আলোক ঝলকানির মত হয়।

অত্র আয়াতে এ নিষিক্তকরণকে বারিবর্ষণের শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অধিকাংশ ফুলের দুটি অঙ্গ থাকে, পুরুষ ও স্ত্রী যা   একসাথে একটি ফুলে বিদ্যমান থাকে, অথবা ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে থাকে। বায়ু পুরুষ ফুলের অঙ্গ থেকে স্ত্রী ফুলের ডিম্বাশয়ে পরাগ বহন করে। এতে ফুল থেকে ফল হয়।

বহু শতাব্দী আগে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসব রহস্যের কথা বলেছিলেন। এগুলো তাঁকে কে শিখিয়েছিলেন?

নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তাঁকে সত্য নবী বলে   প্রমাণ করানোর জন্যে  এগুলো শিখিয়েছিলেন। সুতরাং, পবিত্র কোরআন যে আল্লাহর বাণী, তা কারো অবিশ্বাস করার কোনো অবকাশ নেই।

                        *****

      আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বশান্তি                                            

يا ايها الناس انا خلقناكم من ذكر وانثى وجعلناكم شعوبا وقباءل لتعارفوا ان اكرمكم عندالله اتقاكم ان الله عليم خبير ـ ٤٩ ـ ١٣ ـ

" হে মানব জাতি, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্টীতে বিভক্ত করে দিয়েছি যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। তোমাদের মধ্যে যে অধিক পরহেজগার সে-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞাত।" ( আয়াতঃ ৪৯, সূরাঃ ১৩)। 

পবিত্র কোরআনের এটি একটি মহিমাময় আয়াত। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক ধারনা প্রতিপন্ন করে এবং বিশ্বমানবতার সম্মুখে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করে যে, পৃথিবীতে বহু জাতি বা মানব গোষ্ঠী থাকলেও তারা একই পরিবার থেকে উদ্ভুত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে মনুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে বিরাজিত  হিংসা, দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে বিধাতার গড়া এ সুন্দর পৃথিবী যেভাবে দুর্বিষহ জাহান্নামে পরিণত হতে চলেছে সেটির দ্রুত পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্যেও অত্র আয়াতে জোরালো নির্দেশনার আভাস রয়েছে। 

কোরআনের এ ধারণাটি মানুষকে পারস্পরিক  পরিচিতি,  সাহায্য, সহযোগিতা এবং সেবার  প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠারও স্বর্গীয় প্রেরণা জোগায়।  

এ আয়াতের নির্দেশনাটি প্রথমবারের  মতো মানবতার ইতিহাসে বাস্তবায়িত হয়েছিল। এবং ইউটোপিয়ানগণ দীর্ঘকাল ধরে যে নিখুঁত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার  স্বপ্ন দেখেছিলেন তা' বাস্তবে রূপ নিয়েছিল। এর সুফল ছিলো একটাই আর তা ছিল, বিজ্ঞান, অধ্যাদেশ এবং মানবিক প্রবণতাসহ ইসলামি সভ্যতা যা অন্যান্য সভ্যতার মতো ছিল না। ইসলামি সমাজ ইতিহাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাদা, কালো এবং হলুদ বর্ণের লোকজন কেবল সমতা উপলব্ধি করেছিল। এর বাসিন্দারা ইসলামি সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বস্ততার  সাথে প্রতিযোগিতা করেছিল।

পশ্চিমারা দ্বন্দ্বে লিপ্ত অসংখ্য জাতিতে বিভক্ত হওয়ার বেদনা দায়ক অভিজ্ঞতা অর্জনের পর এ আহ্বানের গুরুত্বটি সম্প্রতি উপলব্ধি করেছে। 

নন ইউরোপিয়ানদেরকে ইউরোপিয়ানরা অবজ্ঞার চোখে দেখে, বর্বর বলে আখ্যায়িত করে এবং তারা সম্মানজনক জীবন যাপনের অধিকারী নয় বলে জ্ঞান করে, তাদের চেয়ে বেশি  ক্ষমতার  অধিকারী বলে প্রমাণ করার জন্যে তাদের উপর বর্বর আক্রমণ চালায়। অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সব দেশীয় সম্পদ লুটে নিয়ে তাদেরকে ক্ষুধার্ত ও  নগ্ন রাখে। 

যাহোক, সম্প্রতি অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদ এ মানবিক আন্তর্জাতিক ধারনাটি বিবেচনায় এনেছেন। তাদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করেছেন,  "বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রার্থক্য কী? আমরা যে পৃথিবীতে  বসবাস করছি, অন্যান্য দেশগুলো কি সে পৃথিবীর অংশ নয়? এক দেশকে অন্য দেশ থেকে পৃথককারী সীমানা গুলোর গুরুত্ব কী? এগুলোকি সামরিক বিবেচনার ভিত্তিতে বা রাজনৈতিক চক্রান্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠত নয়? বিভিন্ন জাতির মধ্যে পার্থক্য কী? তারা কি একই উৎসের বংশধর নয়? " 

"সুতরাং, মানুষ সমগ্র বিশ্বকে নিজের দেশ এবং বিশ্বের সকল মানুষকে সহকর্মী হিসেবে বিবেচনা করে দেশ ও জাতির সীমা ছাড়িয়ে তার চিন্তাভাবনা এবং আবেগকে উর্ধ্বে তোলা কি  অধিক কল্যাণকর নয়? এতে বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে  "মানবতা" হবে একটি সাধারণ জাতীয়তা।"

অতএব, আমরা পবিত্র কোরআনের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে বুঝতে পারি যে এটি আল্লাহর নাযিলকৃত অহি বিধায় পৃথিবীর সব চিন্তাবিদদের পূর্বে মানুষকে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী হওয়ার আহ্বান জানায়।   

এখন আমরা আরেকটি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশ্নটি হলো, "যদি এ মানবতাবাদ সকল জাতির মাঝে জাগ্রত হয়ে একটি মাত্র পতাকার অধিনে একটি বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা কী হবে? 

অনেক চিন্তাবিদ যারা এ ত্রুটিযুক্ত সভ্যতার কারণে বর্তমান সভ্যতার একটি নিকট পতনের প্রত্যাশা করেছেন তাদের মতে সকল সমসামিয়ক আইন বিশ্বরাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে।

সুতরাং, ইসলামই একমাত্র বিধান যা সকল জাতিকে  ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালনা করে তাদের সকল  সমস্যার সমাধান করতে পারে। এ কথা পশ্চিমা অনেক চিন্তাবিদ ঘোষণা করেছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণও করেছেন।

ইসলামী আইন হলো বাস্তব সম্মত। কারণ এ আইন বহু শতাব্দী ধরে মানব জাতির নেতৃত্ব দানের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসছে। এক সময় ইসলাম সুখী ও সর্বাধিক ন্যায়বিচারের সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিল যা দামেস্কাস, বাগদাদ এবং আন্দালুসিয়ায় সমৃদ্ধ হয়েছিল আর এ সভ্যতা বর্তমান সভ্যতার মূল কারণ ছিল।

                             ****

              ইসলাম ও বিশ্বশান্তি

وان طاءفتان من المؤمنين اقتتلوا فاصلحوا بينهما فان بغت احئداهما على الاخرى  فقاتلوالتى تبغى حتى تفى ء الى امر الله فان فاءت فاصلحوا بينهما بالعدل واقسطوا ان الله يحب المقسطين ـ ٤٩ ـ٩

" ঈমানদারগণের মধ্যকার দুটি দল  পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দুটি দলের কোনো একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে, তাহলে তাদের মাঝে ন্যায়  বিচারের সাথে মিমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।"  (সূরাঃ ৪৯, আয়াতঃ ০৯)।

জাতিগুলোর মধ্যে অবশ্যই সন্দেহ, প্রার্থক্য এবং ঝগড়া ঘটবে। তাহলে বিরশ্বশান্তি উপলব্ধি করার জন্যে এ ঝগড়াগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার কী সমাধন হবে? 

চিরাচরিত সমাধান হলো, যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়া। এতে দুর্বলের উপর সবলের বিজয় থাকে সুনিশ্চিত আর এ বন্য-নীতি মেনে চলার মাধ্যমে ঘটে থাকে অধিক রক্তপাত, সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা এবং ভীতির প্রেতাত্মা যা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে চিন্তাবিদগণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর "জাতিসংঘ " প্রতিষ্টা করেন। এরপর "সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ" প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যাতে জাতিগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব বা বিরোধ দেখা দিলে তা' আলাপ আলোচনা বা বোঝাপড়ার মাধ্যমে যুদ্ধ ছাড়া শান্তিপূর্ণ সমাধান দেয়া যায়।

আশ্চর্যের বিষয় এ যে, পবিত্র কোরআন সকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সকল চিন্তাবিদের বহু পূর্বে এ ধারণাটি প্রদান করেছে। এ আয়াতটি আন্তর্জাতিক এমন সংঘটন প্রতিষ্ঠার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যেটি  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করবে এবং যুদ্ধ-বিগ্রহে বাধা প্রদান করতঃ শান্তি বজায় রাখবে। পবিত্র কোরআনের এমন নীতির সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর " সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ" গঠনের মিল দেখা যায়। তবে দুঃখের বিষয়, পবিত্র কোরআনের নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় সংঘটনটি সফলতা অর্জনে ব্যর্থ। 

বিভিন্ন দেশের উপর ন্যায্য সমাধান চাপিয়ে দেয়ার জন্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ( UNO) একটি বিশেষ সেনা গঠনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি অত্র  আয়াত পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত প্রদান করেছে। অন্যথায় এ সংস্থাটি বিশ্বের কোনো আক্রান্ত বা সমস্যায় জর্জরিত জাতির কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না।  

পাঠক নিঃসন্দেহে ইসলামি আইনের মাহাত্ম্যা দেখে আপনি বিস্মিত হয়েছেন। তবে আপনার বিস্ময়টি আরো অনেক বেশি বেড়ে যাবে, যদি আপনি অবশিষ্ট সকল ইসলামি বিধান, যেগুলো বাস্তব সমাধান বলে স্বীকৃত সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পান। ওই বিধানগুলো চরম পরস্পর বিরুধী সমসাময়িক তত্ত্ব ও আইনের উত্তম পয়েন্টগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন করে এবং এদের মন্দ পয়েন্ট ও প্রতিক্রিয়াগুলি এড়িয়ে চলার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

এক কথায় ইসলামে সমকালীন ব্যক্তিবর্গের  মধ্যে বৈঠকের গুরুত্ব রয়েছে যা এটির একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান এবং যা তাদের মধ্যে পুণর্মিলন ঘটায়। এ বৈঠক তাদের সকলকে সন্তুষ্ট  করে, যদি তাদের নেতারা ন্যায় বিচার করে এবং মানব জাতির কল্যণ বিবেচনা করে।

                        *****-

                    ইহুদি চরিত্র 

فبما نقضهم ميثاقهم وكفرهم بايات الله وقتلهم الانبياء بغير حق قولهم قلوبنا غلف بل طبع الله عليها بكفرهم فلا يؤمنون الا قليلا ـ وبكفرهم وقولهم على مريم بهتانا عظيما ـ وقولهم انا قتلنا المسح  عيسى ابن مريم رسول الله وما قتلوه وما صلبوه ولكن شبه لهم و ان الذين اختلفوا فيه لفي شك منه ما لهم  به من علم الا اتباع الظن وما قتلوه يقينا ـ ٤ ، ١٥٥ ـ١٥٧

" শেষ পর্যন্ত তাদের অঙ্গিকার ভঙ্গের জন্যে   আল্লাহর আয়াতের উপর মিথ্যা আরোপের জন্যে, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্যে, "আমাদের অন্তর আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত" তাদের এ উক্তির জন্যে তারা অভিশপ্ত হয়েছিল। অবশ্যই তা' নয়, বরং কুফরীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ তাদের অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছেন এবং এজন্যে তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে। তারপর তাদের কুফরি এবং মরিয়মের প্রতি মহা অপবাদ রটানোর কারণে আর তাদের এ কথা বলার কারণে যে,  "আমরা আল্লাহর রাসূল মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহ-কে হত্যা করেছি।" প্রকৃত পক্ষে তারা তাঁকে হত্যাও করেনি শূলেও চড়ায়নি, বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্যে সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে, আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে, তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করেছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহ-কে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়।"  (সূরাঃ ০৪ আয়াতঃ ১৫৫)।

যিশুখ্রিষ্টকে হত্যার জন্যে শূলে তোলার ব্যাপারে খ্রিস্টানদের যে ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে তা যে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার সেটি অত্র আয়াতে নিশ্চিতরূপে প্রকাশ পেয়েছে এবং বর্ণিত হয়েছে। যাকে হত্যার জন্যে শূলে ওঠানো হয়েছিল তিনি যীশু ছিলেন না, অন্য কোন লোক ছিলেন। আল্লাহ যীশুকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়ে যান। খ্রিস্টান ধর্মের কতিপয় তথ্য প্রদান কারী বলেন, ", ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তি যীশু ছিলেন না। " খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক বারনাবাই " Barnabae" বলেন, " ক্রুশবিদ্ধ ব্যক্তিটি যীশু ছিলেন না, তিনি ছিলেন জুদাস (Judas) নামক অন্য এক ব্যক্তি। 

 وضربت عليهم الذلة والمسكنة وباءو بغضب من الله ذالك بانهم كانوا يكفرون بايات الله ويقتلون النبين بغير الحق ذالك بما عصو وكانوا يعتدون ـ ٢ ـ ٦١ ـ 

" আর তাদের ওপর আরোপ  করা হলো লাঞ্চনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে  লাগলো। এমন হলো এজন্যে যে তারা আল্লাহর বিধিবিধান মানতো না এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করতো। এটা ছিল তাদের অবাধ্যতা এবং শরীয়তের  সীমালংঘনের ফল।"   (সূরাঃ ২,  আয়াতঃ ৬১)।

ضربت عليهم الذلة اين ما ثقفوا الا بحبل من الله وحبل من الناس ـ ٣ ـ ١١٢ ـ

" এদের যেখানে পাওয়া গেছে সেখানেই এদের উপর লাঞ্চনার মার পড়েছে। তবে কোথাও আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মেললে তা অবশ্যই ভিন্ন কথা।" (সূরাঃ ৩, আয়াতঃ ১১২)।

প্রথম আয়াতটিতে ইহুদিদের ধর্মদ্রোহিতা এবং নবীদেরকে হত্যার কারণে তাদের ওপর লাঞ্চনা  আরোপের সাধারণ রায় ঘোষণার উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে তাদের লাঞ্চনা থেকে মুক্তির সাধারণ রায়টিতে  দুটি অবস্থা জুড়িয়ে দেয়া হয়েছে । তন্মধ্যে তারা যেকোনো একটি অবস্থায় লাঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে।

প্রথমত,  তারা তাদের পাপের জন্যে অনুতপ্ত হলে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। দ্বিতীয়ত, কতিপয় জাতি তাদেরকে সাহায্য করলে, তাদের লাঞ্চিত অবস্থার মুক্তি  মেলতে পারে। বর্তমানে তাদের এ দ্বিতীয় অবস্থাটি ঘটছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তির সহায়তায় তারা ফিলিস্তিনে তথাকথিত ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করেছে।

পবিত্র কোরআনের এ ভবিষ্যত বাণীর ১৩০০ বৎসর পরে ইহুদিদের বেলায় এটি বাস্তবে পরিণত হলো।  

ইহুদি যে কত খারাপ জাতি তা " Old Testamen" এ উল্লেখ পাওয়া যায়। এ জাতির লোকেরা এতোই নিষ্ঠুর এবং পাশবিক স্বভাবের যে তারা শত্রুদের পরাজিত করার পর তাদের নিরীহ নারী, নিষ্পাপ শিশু এবং পোষ্য পশু-পাখিসহ সব হত্যা ও ধ্বংস করে ফেলে। (Deut: |||, 6)।  

''জোসুয়া'' এর ( Joshua) মতে, (V|, 21) একটি নগর বিজয়ের পর ইহুদিরা ওই নগরের সকল নর-নারী, যুবক, যুবতী, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, গরু, ভেড়া ইত্যাদি ধারালো তরবারির দিয়ে হত্যা করে ফেলে। 

| Chronicles  (XX3) এর মধ্যে আমরা পড়েছি যে ডেবিড  (Dabid) একটি শহরের লোকজনকে পরাজিত করার পর ওই শহরের সব লোকজনকে করাত দ্বারা জবাই করে মেরে ফেলে।

ইহুদিদের আল্লাহর সাথে চুক্তি লঙ্ঘন এবং তাদের নবীগণকে হত্যা বিষয়ক পুরাতন টেস্টামেন্টে এলিযার উক্তির মতো অসংখ্য অনুচ্ছেদ রয়েছে। যেমন এলিযা  (Elijah) বলেন, " আমি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী প্রভুর প্রতি খু্বই ঈর্ষান্বিত হয়েছি। কারণ, ইসরাইলের সন্তানেরা তার বেদীগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে; তার সাথে চুক্তি  ভঙ্গ করেছে এবং তার নবীদের তরবারি দিয়ে হত্যা করেছে। (| Kings, X|X, 14).

 ইহুদিরা আল্লাহ ছাড়া অসংখ্য দেব-দেবীর পুজা করতো। বিষয়টি পুরাতন টেস্টামেন্টে বহু পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এব্যাপারে এযেকেইলের উদাহরণ দেয়া যায়। এতে ইল্লেখ আছে যে ইহুদিরা মুর্তি, তাম্মুজ  (Tammuz)  এবং সূর্যের পুজা করতো। ( Ezekiel - V|||, 5- 17)।

                         *****

                    উপসংহার

প্রিয় পাঠক,

অত্র পুস্তকে আপনি পবিত্র কোরআনের কতিপয় আয়াত পাঠ করেছেন। আমি নিশ্চিত যে, এগুলো আপনার ভালো লেগেছে এবং আপনাকে আকর্ষণ করেছে। এসব আয়াতে নিহিত আছে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি, আবার এগুলোর মধ্যে কতক আয়াতে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদিসহ রয়েছে মানুষের জন্যে ভবিষ্যতের কিছু সঠিক দিক নির্দেশনা। তাই, কোরআন যে আল্লাহর নাযিলকৃত অহি তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কোনো মানুষের মস্তিষ্কে কখনো এমন তথ্যবহুল চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ বাণী জাগ্রত হতে পারে না বলে আধুনিক বিজ্ঞানও তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছে।

এ আয়াতগুলো অধ্যয়নের পর ইসলাম ধর্ম  গ্রহণের ব্যাপারে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস বিবেচনায় আনার জন্যে আমরা আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি। ইসলাম একটি শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এ ধর্ম হযরত ইসা (আ.) কে অত্যাধিক সম্মান প্রদর্শন করে। পশ্চিমা দেশসমূহে যেসব ভয়াভহ সমস্যা এদের জনগণকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে সেসব সমস্যার সঠিক সমাধান রয়েছে এ শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে। যতো দ্রুত সেসব দেশে ইসলামি সমাধান প্রয়োগ করা হবে না, ততো দ্রুত তাদের জনগণের ভয়াভহ সমস্যাদির সমাধান হবে না। ইসলামি সমাধানগুলো যে বাস্তবভাবে কার্যকরী তা বিজ্ঞ চিন্তাবিদগন অকপটে স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ " বার্নাড শ"  (Bernard Shaw) এর উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, " খুব শিঘ্রই আগামি প্রজন্মের ধর্ম হবে ইসলাম।"

ইসলাম ধর্মে ঈমান আনলে এবং এর নীতিমালা অনুসরণ করলে আপনি ইহকাল এবং পরকালে সুখী হবেন। সুতরাং, আপনার কখনো সত্য ধর্ম ইসলাম এবং এর দ্বারা প্রবর্তিত অলৌকিক ধারণাগুলো কখনো অস্বীকার করা উচিত হবে না। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং প্রমাণের ফলস্বরূপ আধুনিক সব মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা এ জাতীয় ধারনাকে সমর্থন করেছে।

প্রিয় নিরপেক্ষ পাঠক, মনে রাখবেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে আপনি খ্রিস্টান ধর্ম থেকে দূরে সরে যাবেন না, বরং এর খুব নিকটেই থাকবেন। কারণ, ইসলাম এসেছে খ্রিস্টান ধর্মকে পরিপূর্ণ করার জন্যে আর এর মধ্যে পরবর্তিতে যেসব মনগড়া তথ্য সংযোজিত হয়েছে সেগুলো সংশোধন করার জন্যে। এ ধর্মের মধ্যে যে পরবর্তিতে মনগড়া তথ্য সংযোজিত হয়েছে তা পশ্চিমা চিন্তাবিদগণ স্বীকার করেছেন।

যাদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় নেই এমন কিছু লোকের মিথ্যাচার এবং মনগড়া কথা শোনার ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। এধরণের লোকেরা প্রলুব্ধকারী সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রদত্ত কিছু অর্থের বিনিময়ে তাদের নিজস্ব বিবেক বিক্রি করে দেয়। এরা খ্রিস্টান ধর্মযাজকদেরকে তাদের অদম্য লক্ষ্যগুলো পূরণ করার জন্যে ইসলামের আসল শিক্ষাকে বিকৃত করে ইসলাম আক্রমণের নির্দেশ দেয়।   

মুসলিম বিদ্বেষী পক্ষপাতদুষ্ট যেসব লোক সব সময় পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ঘৃণা করে এবং এ ধর্ম পরিত্যাগ করার  জন্যে নানাভাবে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্যে আমি শ্রদ্ধেয় সকল পাঠককে আহ্বান জানাচ্ছি। ইসলাম বিদ্বেষী পক্ষপাতদুষ্ট এ লোকগুলো হলো; ইহুদি,  পশ্চিমা খ্রিস্টান, পাদ্রি, সাম্রাজ্যবাদী এবং পুরোহিত সম্প্রদায়। ইসলামি ছায়াতলে বিশ্বমানবতা গর্জে উঠুক, এরা তা কামনা করে না। এরা জানে, ইসলামি নীতিমালা এদের ভ্রান্ত উচ্চাকাঙ্খার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই তারা মুসলমানদেরকে কোনঠাসা করে রাখার জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় এবং শক্তি প্রয়োগ করে, বর্তমান মুসলমানদের মাঝে  অনৈক্য, পশ্চাদপদতা এবং দুর্বলতা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে আর এর দ্বারা ইসলামকে একটি আধুনিকতা বিবর্জিত ধর্ম বলে জনসম্মুখে উপহাস করে। বর্তমানে মুসলমানদের এ দুরাবস্থার কারণ হলো, তারা ইসলাম ধর্মের নীতিমালার পূর্ণ অনুসরণ করে না। তাই, ইসলাম মানে বর্তমান মুসলমান  নয় এবং মুসলমানদের অনুন্নতি ও দুর্বলতার জন্যে ইসলাম দায়ীও নয়। সুতরাং, ইসলাম মানে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান আর এ বিধান পূর্ণরূপে অনুসরণ-অনুকরণসহ এর প্রতি আত্মসমর্পনকে বুঝায়। এ বিধানে রয়েছে বিশ্বমানবতার  ইহকাল ও পরকালীন মুক্তি, সর্ব সফলতা, সুখ ও শান্তি। অতএব, ইসলাম সম্পর্কেে এ ধারণাটি সম্মানিত পাঠকের স্মরণে থাকতে হবে।

যখন মুসলমানগণ তাঁদের ধর্মকে আঁকড়িয়ে ধরে রেখেছিলো, তখন তাঁরা ঐতিহাসিক সাক্ষ্য এবং, মানবজাতির গুরু হিসেবে সমগ্র চেনা বিশ্বকে জয় করে অলৌকিক গতিতে একে সভ্য সমাজে পরিণত করেছিলেন। পক্ষান্তরে, যখন ইউরোপীয়রা তাদের উত্তরাধিকা সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মকে আঁকড়িয়ে ধরে রেখেছিল, তখন তারা ভয়ংকর অন্ধকার এবং অত্যন্ত পেছনে পড়া অবস্থায় ছিল। কিন্তু যখন তারা এটি ত্যাগ করে আন্দালুসিয়া  (ইসলামিক স্পেন) এবং ক্রুসেডের মাধ্যমে ইসলামি সভ্যতার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, তখন থেকে তারা পশ্চাদপদতা থেকে মুক্তি পেয়ে সভ্যতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তবে তারা জীবনের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করে শুধু জড়তার দিকে মনোনিবেশ করে। এভাবে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে। ঐশ্বরিক দিকনির্দেশনার অভাবে তাদের অগ্রগতি বিপর্যস্ত হয়। এতে তারা এবং বিশ্বের সর্ব বস্তু  মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়। পশ্চিমা চিন্তাবিদগণ এ অবস্থাকে সভ্যতার নিকটতম পতন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা অরো বলেন যে, বস্তুবাদীদের দ্বারা সঙ্ঘটিত একটি পারমানবিক যুদ্ধে সমগ্র পৃথিবী নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই তারা অনতিবিলম্বে আধুনিকতাবাদ এবং জড়বাদের সংমিশ্রণে একটি যৌথ সভ্যতা যা ইসলামি জীবন বিধানের অন্যতম নীতি তা রাষ্ট্রীয়ভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে জোরালো আহ্বান জানান। 

যাহোক, আমরা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি নাযিলকৃত  অহির সত্যতা প্রমাণস্বরূপ মহাবিশ্ব, মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদ ইত্যাদির রহস্য আলোচনার পর অত্র পুস্তিকাটির শেষ প্রান্তেে এসে পৌঁছে গেছি। এর আলোচনায় আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, তাঁর অসীম ক্ষমতা, তিনি যে এক, যার কোনো সহযোগী, স্ত্রী-পুত্র কেউ নেই, সেই একক সত্তার আমরা উপাসনা করি, তাঁর কাছে আবেদন নিবেন করি আর এটাই হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষার  ভিত্তি প্রস্তর। 

হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশেষ নবী যাঁর নবুয়তের ঘোষণা দিয়ে গেছেন যীশুখ্রিস্টসহ পূর্ববর্তী সকল নবী। গসপেলে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শেষ নবী হওয়া  সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো বর্ননা রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি বর্ননা হলো, যেমন;  যীশু  বলেছেন; " আমি চলে যাওয়াই তোমাদের পক্ষে সমীচীন, কারণ, আমি যদি চলে না যাই, তাহলে শান্তিকামী তোমাদের নিকট আসবেন না; তবে আমি যদি চলে যাই, তাহলে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠাবো; ........ তবে আমি তোমাদেরকে আরো  অনেক কিছু বলতে চাইছি কিন্তু তোমরা তা বহন করতে পারবে না। তবু তিনি, সত্যের আত্মা যখন আগত, তিনি তোমাদেরকে সব সত্যের দিকে পরিচালিত করবেন। কারণ, তিনি নিজের বিষয়ে কথা বলবেন না। তিনি যা শুনবেন, তা বলবেন এবং তোমাদেরকে আগত বিষয়গুলো দেখিয়ে দেবেন। তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন। তিনি আমার কাছ থেকে গ্রহণ করবেন এবং তোমাদেরকে দেখাবেন।" ( জন- XV।, 7-15)।

                          ******

   ইসলামের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা

 আমরা এখানে ইসলামের কতিপয় গুুুুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা আলোচনা করতে যাচ্ছি যাতে এ ধর্ম সম্পর্কে আপনি একটি সুন্দর ও সহজ-সরল ধারণা পেয়ে থাকেন এবং এর সাথে এ আশাও ব্যক্ত করি যে, মহান আল্লাহ যেনো আপনার অন্তরকে এ ধর্মের প্রতি  উদার করে দেন।

১।সৃষ্টির উপাসনা থেকে মানুষকে এক আল্লাহর উপাসনায় ফিরিয়ে আনা। উপাস্য একমাত্র আল্লাহ, যার কেনো স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা কেউ নেই। তিনি সর্বস্রষ্টা, সর্বশক্তিমান, এক এবং অদ্বিতীয়। 

এটা স্পষ্ট যে, একাধিক স্রষ্টার উপাসনা মানুষের ব্যক্তিত্বকে হত্যা করে। নিজের আত্মাকে লাঞ্চিত করে এবং নিজেই আসল সত্যটিকেই অস্বীকার করে। সমগ্র বিশ্ব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরূপে সমজাতীয় বিন্যাস প্রমাণ করে যে স্রষ্টা শুধু একজন। পবিত্র কোরআন বলে, " যদি স্রষ্টা একাধিক হতো, তাহলে পৃথিবী ও আকাশকে পৃথক করে ফেলা হতো।" সুতরাং,  এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করা যাবে না।

২। বিধান চলবে শুধু আল্লাহর। মানব রচিত বিধান মোতাবেক জীবন চলবে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে আল্লাহর আইন। মানুষ মানুষের জন্যে সঠিক ও কার্যকরী আইন নির্বাচন করতে সবসময় ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সে তার আত্মার প্রকৃত মঙ্গল কী হতে পারে সে সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ।

৩। মানবাধিকার ঘোষণা করা।  বিশেষতঃ জাতিসমুহের মধ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমতা বজায় রাখা, যাতে জাতিগত বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতে মানবতার কল্যাণে সম্মাননা প্রদান করা। 

৪। শারিরীক পবিত্রতা এবং ব্যায়াম উভয়টি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম যা অবহেলা করা যাবে না। ইসলামিক ওজু এবং নামাজ পদ্ধতিতে যে অত্যন্ত কার্যকরি শরীরচর্চা, পাশাপাশি  আল্লাহর সাথে আধ্যাত্মিক যোগাযোগের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা' এ নীতিতে ইসলামি সমর্থনের একটি উদাহরণ।

৫। ধনীদের গরীবের প্রতি সুন্দর আচরণ করা। গরীবদেরকে দেয়ার জন্যে তাদের প্রতি যে যাকাত পদ্ধতি বাধ্য করা হয়েছে তা সঠিকভাবে প্রদান করা। এতে সমাজিক সুবিচার এবং শান্তি বজায় থাকে।

৬। আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে  প্রতিবছর পুরো  এক মাস (সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত) রোজা রাখা। এতে ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হয়, দেহ বিষদুষ্ট প্রভাব থেকে মুক্ত হয় , পার্থিব চাওয়া পাওয়া এবং আনন্দ -উল্লাসের প্রতি আসক্ত মনের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় হয়ে নতুনভাবে পূত জীবন গঠন করা যায়।

৭।  জীবনে একবার মক্কায় হজ্জ পালন বাধ্যতামূলক  ( এটি শুধু ওই সমস্ত লোকদের জন্যে যারা অন্ততঃপক্ষে হজ্জ নিস্পন্ন হওয়া পর্যন্ত মক্কা-মদিনায় অবস্থানসহ খানাপিনা ও আসা যাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করতে সক্ষম)।  এটি একটি বৃহৎ ইসলামি সম্মেলন যা  প্রতি বছর মক্কায় অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের জন্যে এ সম্মেলনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অনেক।

৮। স্মরণ রাখতে হবে যে এ জীবনের পরে আরেকটি জীবন রয়েছে যে জীবনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পূর্ববর্তি প্রার্থিব জীবনের কৃত কর্মের জন্যে পুরস্কার বা শাস্তি পেতে হবে। এ বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে রাখলে মানুষ মন্দ কাজ পরিহার করে ভাল কাজ করার প্রেরণা পায় এবং নিজের কর্মের জন্যে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে। সুতরাং, মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবনের ধারণা মানুষকে পরিপূর্ণতার দিকে পরিচালিত করে।

৯।  গৌরবময় জীবন এবং সভ্যতার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সাথে অগ্রসর হওয়ার জন্যে মোসলমানদেরকে উপদেশ প্রদান করা।

 ১০। বিশ্বে শান্তি বজায় রাখা। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, আগ্রাসন, ঘৃণা এবং দুর্নীতি নির্মূল করা।

১১। মহাবিশ্বের অলৌকিক গঠন এবং শৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং ধ্যান করা। এতে এক স্রষ্টা সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস দৃঢ় হয় এবং মানুষকে আকাশ ও পৃথিবীর সর্ব বস্তুর ব্যবহার ও গবেষণার দিকে চালিত করে, যা মানুষের আয়ত্তাধীন বলে ইসলাম ঘোষণা করে।

১২। প্রত্যেকের এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, মানব জাতি মূলত এক পরিবার। সুতরাং, আমাদেরকে অবশ্যই এর ঐক্য উপলব্ধি করতে হবে। এক স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং একটি স্থায়ী আইন এবং নৈতিক সংবিধানের অধীন হতে হবে। যা মানবসৃষ্ট  আইন ও আচরণের মতো কখনো পরিবর্তন হয় না। মানব রচিত সকল আইন বিভিন্ন দেশ এমন কি বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন বিবাদ সৃষ্টি করে এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে।

প্রিয় পাঠক, আপনি জেনে  অবাক হবেন যে, কীভাবে ইসলাম যে কোনো কালে, যে কোনো স্থানে যথেষ্ঠ কার্যকর থাকতে পারে, যদিও এটি এর আইনে কোনো পরিবর্তন আনতে দেয় না। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে, এ ধর্মটির একটি অপরিবর্তনীয় মতাদর্শ থাকা সত্ত্বেও এটি এর অনুসারীদের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখে, তাহলে আপনি আর অবাক হবেন না। যাহোক, এটি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল মনোভাব গ্রহণ করে।

ইসলামি আইনের স্বর্গীয় উৎস রয়েছ যা প্রাকৃতিক, এবং ভৌতিক আইনগুলোর মতো অপরিবর্তনীয়। এ আইনগুলো ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতির জন্যে কল্যাণ বয়ে আনে। মধ্যযুগে এ আইন প্রাচ্যের এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল (  যখন ইউরোপ পশ্চাদপদ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল)। তখন সর্বোত্তম  ছিল এর ফলাফল। এটি পৌত্তলিকতা, অজ্ঞতা এবং সব রকম ভ্রান্তি থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছিল। এর ফলশ্রুতিতে  আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ও পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান আবির্ভূত হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ চিন্তাবিদ ও ঐতিহাসিকগণ একমত পোষণ করেন।

ইসলাম গ্রহণ না করে এর থেকে দূরে থাকার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের জনগণকে অনেক ভোগতে হয়েছে। একমাত্র ইসলাম হলো তাদের প্রকৃত বন্ধু।  এর উপর নির্ভর করে তাদের পূর্ণ সুখ-শান্তি ও অগ্রগতি আর সকল প্রকার দাঙ্গাহাঙ্গামা থেকে এটিই তাদেরকে দিতে পারে নিরাপত্তা। সুতরাং, যদি পশ্চিমা বিশ্বের লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, তাহলে তারা পূর্ণ সুখ-শান্তি উপভোগ করতে সক্ষম হবে এবং মুক্ত হবে সর্বপ্রকার উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও রক্তপাত থেকে।

ইসলামের শত্রুদের দ্বারা সৃষ্ট ইসলাম বিরোধী অভিযোগের বিরুদ্ধে  সর্বদা সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরী। তারা এ পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে মিথ্যা রটায় , যাতে মানুষ এটি অপছন্দ  করে। কারণ, এটি তাদের অন্যায় বৈষম্য থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করতে পারে। তবে পশ্চিমের লেকেরা যখন ইসলাম গ্রহণ  করবে, তখন তারা এই  ধোঁকাবাজদের বিচার করবে। কারণ তারা বহু শতাব্দী ধরে পশ্চিম থেকে ইসলামের  আলোর মাঝে পর্দা টেনে দিয়ছিল। মহান আল্লাহ বলেন, "যারা অন্যের প্রতি অবিচার করবে, তাদের জন্যে  যে অত্যান্ত ভয়ানক অবস্থা অপেক্ষা করছে তারা তা পেয়ে  থাকবেই।"

প্রিয় মুক্তমনা পাঠক! পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট এ প্রার্থনা করে  আপনাদেরকে বিদায় জানাতে চাই যে, তিনি যেনো মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর সত্য ধর্ম ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার তৌফিক দান করেন, যে ধর্ম সবার জন্যে নিশ্চিত করতে পারে  সুখ-শান্তি; সমাধান দিতে পারে সব সমস্যার আর  মানুষকে উপহার দিতে পারে সত্যিকারের একটি সভ্যতা।

আল্লাহ হাফিজ।