ফেইসবুকে কোরআন অবমাননার চবি সম্পর্কে
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী
অনেক সময় ফেইসবুকে কতিপয় পাপীষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পবিত্র কোরআন অবমাননার কিছু নিকৃষ্ট ও নিন্দনীয় ছবি পোস্ট ও শেয়ার করতে দেখা যায়। যে ব্যক্তি বা যারা এ জাতীয় পোষ্ট বা শেয়ার করে সে বা তারা ওই ছবির ওপর লিখে দেয়" এ জানোয়ার মহাগ্রন্থ আল- কোরআনকে এভাবে অবমাননা করেছে। একে সবাই সনাক্ত করুন। এর হাত পা কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খেতে দিন অথবা একে সিদ্ধ গরম পানিতে জীবন্ত ফেলে দিন ইত্যাদি, ইত্যাদি।"
পোস্টের ধরণ অনুযায়ী প্রতীয়মান হয়; যে বা যারা এ জাতীয় পোস্ট করে সে বা তারাই যে পবিত্র কোরআন অবমাননাকারী বা কোরআন অবমাননার সহায়তাকারী তা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। কারণ,কোরআন শরীফকে অবমাননা করতে দেখেইতো সে বা তারা ওই ছবিটা তোলে ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়েছে আর ঘটনাটি যে তার বা তাদের এলাকার কোথাও ঘটেছে সেটিও সুস্পষ্টভাবে অনুমান করা যায়। সুতরাং, সে বা তারা তো এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু সে বা তারা তা না করে এর উল্টোটা করে বসে যা দ্বারা পবিত্র কোরআনের মারাত্মক অবমাননা হয়। অতএব, ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ অবমাননার জন্যে এদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া অতীব প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেক সময় সমাজে মারাত্মক দাঙ্গার সুচনা ঘটে; সুশৃঙ্খল সমাজে নেমে আসে অশান্তি ও অরাজকতা।
যে সব পাপীষ্ট এ জাতীয় কাজ করে থাকে তারা অবশ্যই অমুসলিম এবং ইসলাম ধর্মের ঘোর বিরুধী; সমাজে সত্য ও ন্যায়-নীতির বিরুদ্ধে অসান্তির দাবানল সৃষ্টিকারী দু পায়া জানোয়ার।এ কাজে এদের যে নোংরা উদ্দেশ্য থাকে তা হলো, ফেইসবুকে এ জাতীয় ছবি দেখলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ উত্তেজিত হয়ে উঠবেন, ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠবে তাদের অন্তরে। এতে অমুসলিম বা ভিন্ন ধর্মীদের দেখা মাত্রই হয়তো শুরু করে দেবে আক্রমণ, শুরু হবে সংঘাত, ঝরবে রক্ত, যাবে তাজা তাজা প্রাণ। এসব অঘটন ঘটার পরে মুসলমানদেরকে জঙ্গিবাদী আখ্যায়িত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এদেরকে দুর্বল করা খুবই সহজ হয়ে যাবে। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদেরকে দুর্বল ও শায়েস্তা করার জন্যে চলেছে এজাতীয় হাজারো কৌশল।
ফেইসবুকে এসব নোংরা ও ঘৃণিত স্ট্যাটাস দেয়া
থেকে সবাই বিরত থাকবেন। কারণ, পবিত্র আল-কোরআন হলো ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতিমালাসমৃদ্ধ চির পরীক্ষিত একটি নির্ভুল ধর্মগ্রন্থ। এর নির্ভুলতার মূল কারণ হলো যে এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট আসমানি কিতাব। এ গ্রন্থ সত্য-ন্যায়-নীতি, সুবিচার, ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ব ধৈর্য,সহানুভুতি, সহযোগিতা, উদারতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সর্বপ্রকার মানবিক গুণাবলির পক্ষে কথা বলে; অজ্ঞতার অন্ধকারে মানুষকে জ্ঞানের আলো দান করে; মানুষ এবং স্রষ্টার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে; মানুষকে সত্য, সুন্দর ও শান্তিময় পথে চলার জন্যে উৎসাহ দিয়ে থাকে, সুন্দর চরিত্র,সুন্দর পরিবার, সুন্দর সমাজ এবং সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার যাবতীয় উপাদান সরবরাহ করে থাকে। অতএব, যারা এ গ্রন্থের অবমাননা করবে এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলবে তারাই জঘণ্য পাপী; তারাই মানবতার কলংক; তারাই মানবতার অধঃপতন আহ্বানকারী।
দুনিয়ার সব ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে এ পৃথিবীতে সুন্দর ও শান্তিময় পথে পরিচালনা করা। অতএব, সকল ধর্মের মানুষ যদি ভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজ নিজ ধর্মেরর অনুশাসনগুলো যথাযথভাবে মেনে চলে, তাহলে এ পৃথিবীতে থাকতে পারে না মানুষে মানুষে কোনো দ্বন্দ্ব, হিংসা রক্তপাত ও যুদ্ধসহ মানবতাবিরোধী সকল কর্ম। এর ফলে, এ সুন্দর পৃথিবীটা নিঃসন্দেহে হতে পারে একটা স্বর্গ।
বর্তমান এ বিজ্ঞান সভ্যতার যুগে এ সব জানার পরেও যেসব লোক ভিন্ন ধর্মের প্রতি এমন জঘণ্য, নীচক ও ঘৃণিত আচরণ করে, তাদেরকে কখনো মানুষ বলা যায় না; তারা হলো দু'পায়া জানোয়ার। এদের স্থান পশুর চেয়েও অনেক নিম্নে। তাই এদের বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলা শুধু মুসলমানদের দায়িত্ব নয়, শান্তি প্রতিষ্টার লক্ষ্যে সকল ধর্মের অনুসারীদেরও দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। মনে রাখতে হবে,
" ধর্ম মানুষকে খাঁটি মানুষ করে গড়ে তোলে আর ধর্মহীনতা মানুষকে পশুতে পরিণত করে।"