'এপ্রিলপুল' কি?
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী
ইংরেজি সনের ৪র্থ মাসের নাম হচ্ছে 'এপ্রিল' (April) এবং পুল (Fool) শব্দের অর্থ হচ্ছে বোকা। অতএব, 'এপ্রিলপুল' মানে এপ্রিল মাসের বোকা। তাই, কারা এ এপ্রিল মাসের বোকা সেটি জানার জন্যে ইতিহাস পাঠ একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। যাদের এ ইতিহাস জানা নেই, তাদের জন্যে ইতিহাসটি সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরলাম।
এনসাইক্লোপিডিয়া ও ইতিহাস গ্রন্থের বরাতে
ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া সম্পাদিত ‘পহেলা এপ্রিল’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, স্পেনের অত্যাচারিত মানুষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরি মুতাবেক ৭১১ খ্রি. স্পেনে প্রবেশ করেন। তারাই ইউরোপের মানুষদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন। স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ও অন্যান্য শহরে মুসলমানগণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাদের স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালযগুলোতে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। ৭১১-১৪৯২ খ্রি. পর্যন্ত প্রায় আটশ বছর ধরে স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল মুসলমানগণ শাসন করেন। এটি ছিল মুসলমানদের জন্য স্বর্ণযুগ। শেষ দিকে তাঁদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিগণ কুরআন-সুন্নাহ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার মায়ায় মত্ত হয়ে যান। নেতার নির্দেশ তাঁরা অমান্য করে চলেন।এতে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা বেড়ে যায়। তখন তাঁরা স্পেন ছাড়তে বাধ্য হন। ফলে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের ক্ষমতা থেকে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অঞ্চল ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৫২২ বছর আগে মুসলিম অধ্যুষিত
৮৯৮ হিজরি মোতাবেক ১৪৯৩ খ্রি. রাজা
ফার্দিনান্ড ও রানী ঈসাবেলার যৌথ উদ্যোগে
মুসলিমদের শেষ রাজধানী গ্রানাডা দখল করে নেয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চিকিৎসা, রাজনীতি, স্থাপত্য, শিল্প ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখে মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য রাজা ফার্দিনান্ড এক ভয়ঙ্কর ফন্দি আঁটে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধে মুসলমানগণ পরাজিত হয়ে রাজা-রানীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এমতাবস্থায় ফার্দিনান্ড ঘোষণা করে, যেসব মুসলিম, মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেবে, তাদেরকে নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হবে। তার ঘোষণায় চল্লিশ হাজার মুসলমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে গ্রানাডার বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। মসজিদের দরজাগুলো বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের মেঝেতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে তাদেরকে হত্যা করে রাজা ফার্দিনান্ড। ঐতিহাসিক এক বর্ণনা মতে তিন দিন ধরে হত্যার উৎসব চলে। মসজিদের বাহিরেও অসংখ্য মুসলিমকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই করে হত্যা করে। অনেক মুসলিমকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে। অথচ মুসলমানগন এ রকম একটি অবস্থার জন্য প্রস্তুত না থাকায় সেদিন তাদের এমন করুণ অবস্থার সূচনা হয়। শুধু তাই নয়, সেদিন খ্রিস্টান গুরুর আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবি পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। কেবল মুসলিমগণ নয়, ইয়াহুদীদের উপরও খ্রিস্টানেরা সেদিন একই রূপ অত্যাচার চালায়।
এ সময়ে রাজা ফার্দিনান্ড উপহাস করে বলেছিল,
হায় মুসলমান, তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা।
মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাসের মাধ্যমে বোকা
বানানোর সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে এপ্রিল ফুল পালন করা হয়। ফলে, খ্রিস্টানরা কর্ডোভার সেই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করে। মসজিদের ভেতরে দরজা ও জানালার ফাঁকে ফাঁকে মূর্তি স্থাপন করে। এভাবেই তারা মুসলিম ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে ফেলে। এ ঘটনা ছাড়া আরো দুটি ঘটনার কথা উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ থাকলেও বর্ণিত ঘটনাটিই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ বলে ঐতিহাসিকগণ মত প্রকাশ করেছেন। (দৈনিক ইনকিলাব, ২৮/৩/২০১৫)।
অতএব, মুসলিম দেশে মুসলমানদের এপ্রিলপুল পালন যুক্তিসঙ্গত নাকি লজ্জাকর তা ভেবে দেখুন।