মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী
মুজিব তুমি
বাংলার আকাশে ভোরে জাগা
রক্তিম থালার মত
নিশার তিমির তাড়িত রবি
আর অগণিত মিটিমিটি তারার মাঝে
সুধাকরের স্নিগ্ধ হাসি।
মুজিব তুমি
সুজলা-সুফলা- শস্য-শ্যামলা এ বঙ্গবাগের
চেনা- অচেনা অসংখ্য ফুলের মাঝে
প্রস্ফুটিত নয়নকাড়া এক অপরূপা ফুল,
যে ফুলের সুহাস জাগায় খুশির জোয়ার,
আর মৃদু সমীরণে ছড়িয়ে দেয়
এর মাতাল করা সুবাস।
মুজিব তুমি
প্রকৃতির খেলাঘর লাল সবুজের এ বঙ্গে
এক ব্যাতিক্রম প্রজন্ম,
তোমার আবির্ভাবে বাংলা ও বাঙ্গালি
পেয়েছে নতুন প্রাণ; হয়েছে ধন্য,
নবরূপে জেগেছে বন-বনানী,
মাটি মা পেয়েছে উর্বরতা,
নদ-নদী পেয়েছে প্রবাহের উচ্ছ্বাস,
আর সিন্ধুতে জেগেছে বিজয়ের হিল্লোল।
প্রলয় নেশার মেঘ দূরিভূত হয়ে
বঙ্গের আকাশ পেয়েছে উন্মুক্ত উদারতা,
কাননে শাখীর শাখায় শাখায় পাখির কণ্ঠে
জেগেছে অপূর্ব মূর্ছনা আর ঋতুরাজ পেয়েছে
নির্ভিক স্বাধীনচেতা বসন্তদূত যার সুরেলা কুহরণে মুখরিত থাকে এ চির সবুজ বাংলা।
মুজিব তুমি
শোষকের মুখেমারা সিংহের থাবা,
হায়েনা বিতাড়নের ব্যঘ্রগর্জন,
যে গর্জনে হিংস্ররা হয়ে যায় সন্ত্রস্ত;
প্রাণ রক্ষায় খুঁজতে থাকে গহিন বন;
দিগ্বিদিক ছুটে পালায় কুরঙ্গের মত।
মুজিব তুমি
বাংলার অন্তরীক্ষে পরাধীনতা নিঃশেষের
ইঙ্গিত বহনকারী উজ্বল শুকতারা,
স্বাধীনতার ঢেউ জাগানো বহতা নদী,
লেখক-লেখিকার ক্ষুরদার লেখনী,
বীরের হস্তে বিজয়ের শানিত তরবারি,
সশস্ত্র সৈনিকের সামনে চলার
অপ্রতিরুদ্ধ প্রবল উদ্দীপনা,
'হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু-' এ চেতনা জাগানো
এক শ্রেষ্ট কাণ্ডারী।
মুজিব তুমি
এ রূপসী বাংলায় বজ্রকণ্ঠের এক বিপ্লবী বীর
তোমার কণ্ঠে থাকে যাদুর আকর্ষণ,
অনলবর্ষী তোমার ভাষণ, মধুর তোমার কণ্ঠ,
সত্য ও বস্তুনিষ্ট তোমার রাজনৈতিক দর্শন,
চির উন্নত তোমার শির,
চিত্ত তোমার মহত্বের বিশাল রাজ্য,
বাঙ্গালীর অধিকার ও সুখৈশ্বর্যে তুমি ছিলে
প্রতিবাদীকণ্ঠ ও অস্থির।
জাতিকে চির সুমহান রাখা ছিল
তোমার স্বপ্ন ও ধ্যান,
একারণে ৭ই মার্চে শোষকের বিরুদ্ধে তুমি
বাঙ্গালিকে করেছ ঐক্যের উদাত্ত আহ্বান;
করেছ ঘোষণা, "এবারের সংগ্রাম,
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম,
স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
মুজিব তুমি
আমাদের জাতির পিতা,
বাঙ্গালিদের নয়ন মণি, গর্বের ধন, স্মরণীয়,
বরণীয়, অনুকরণীয় ও সর্বজনশ্রদ্ধ
কাঙ্ক্ষিত এক অসাধারণ নেতা।
তাইতো দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্যে
তোমার আহ্বানে এ সোনার বাংলায়
শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী, ও
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মাঝে নবরূপে জেগে ওঠে
সংগ্রামের এক অপ্রতিরুদ্ধ ঢেউ, ব্যঘ্রতুল্য
সাহসী চেতনা ও উন্মাদনা।
শুধু তাই নয়, আকাশ, বাতাস ও পাতালে চলে জনতার সংগ্রামী মিছিলের অনুরণন
আর সর্বত্র বিরাজমান থাকে তোমার
নির্দেশনা ও অনুশাসন।
অবশেষে বাঙ্গালিদের বাংলা মারে
মাত্র নয় মাসে লেজ গুটিয়ে পালায়
শোষক গোষ্ঠী, বাঙ্গালি ছিনিয়ে আনে
লাল সবুজের পতাকা আর
বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন- সার্বভৌম
এ বাংলাদেশ পেয়ে থাকে গর্বিত আসন।
মুজিব তুমি
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি,
বাংলার স্বাধীনতার স্থপতি,
এ দেশের আকাশে স্বাধীন সার্বভৌমত্বের
উদীয়মান সূর্য, তবে সূর্য অস্ত যায় বেলা শেষে
পশ্চিমাকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে
আর তুমি অস্তিমিত হয়েছ সপরিবারে,
মনুষ্য হায়েনাদের আঘাতে; স্বদেশের মাটি
রক্তে রঞ্জিত করে।
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট তোমার রক্তে ভেজা
বাংলার মাটি লাল আভা ছড়িয়ে
সমগ্র জাতিকে কাঁদায়।
মুজিব তুমি
দেশমতৃকা ও নিজ জনতার পক্ষে
কথা বলতে গিয়ে শোষক গোষ্ঠীর
অপরিসীম নির্যাতনের শিকার হয়েছ বার বার,
হয়েছ বহু মিথ্যা মামলার আসামি,
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়েছ অকারণে,
কারাবরণ করেছ হাস্যমুখে,
পরিবারে নেমে আসে মহা যাতনা ও দুর্ভোগ,
সবশেষে ঘাতকের গুলিতে সপরিবারে
শাহাদাত বরণ করেছ প্রিয় মাতৃভূমির মাটিতে।
মুজিব তুমি
পরিবারের একজন সার্থক পিতা,
রেখে গেছো তোমার সাহসীচেতা বীরা মেয়ে
বঙ্গের অগ্নিকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
সে তোমার সার্থক মেয়ে,
নিয়েছে তোমার হত্যার প্রতিশোধ,
জিব কেটে মিটিয়ে দিয়েছে হায়েনাদের
রক্ত পানের স্বাদ।
মুজিব তুমি
পরকে ভাবতে নিজের মত আর
নিজকে বিলিয়ে দিতে পরের জন্যে।
বাংলা ও বাঙ্গালির উৎকর্ষ সাধন ছিল তোমার
কর্ম, চিন্তা, সপ্ন ও গবেষণা।
তাইতো বঙ্গালিদের হৃদয়ের মণিকোটায়
রয়েছে তোমার চির আসন।
সত্যই তুমি এক কিংবদন্তি ;
তোমার উদাহরণ তুমি নিজেই।
তুমি অমর,।!
অক্ষয় তোমার নাম,
তোমাকে জানাই
শ্রদ্ধা ও সালাম।