Sunday, April 9, 2017

সন্দীপ সমাচার

সন্দীপ সমাচার

মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব
     উপকূলে যে দ্বীপ,
সেটি হচ্ছে জলেঘেরা
      উর্বর মাটির সন্দীপ।

মেঘনা নদীর মোহনায় আর
       বঙ্গপসাগরের,
দক্ষিণ পূর্বকোণে স্থিতি
     এ অপরূপ দ্বীপের।

এ দ্বীপটি বীর চট্টগ্রাম
     জেলার অন্তরর্গত,
স্বীয়রূপে যুগ যুগ ধরে
       আছে সমুন্নত।

এককালে এ দ্বীপকে নিয়ে
      বঙ্গের ছিলো গর্ব,
কালের বিবর্তনে তা আজ
       হয়ে গেছে খর্ব।

এ দ্বীপেরও নাম করণের
       আছে ইতিহাস,
জেনে নিন সব পাঠক যারা
     বাংলায় করেন বাস।

এর নামকরণ নিয়ে আবার
     ঐতিহাসিকগণ,
ভিন্ন ভিন্নভাবে করেন
      তাদের মত পোষণ।

চট্টগ্রামে আসার পথে
  বারো আউলিয়াগণ,
এ দ্বীপটিকে মানবশূন্য
   দেখেছিলেন তখন।

তাই তাঁরা এ দ্বীপের নামটি
      রাখেন শূন্যদ্বীপ,
পরে কিন্তু রূপ পেয়ে যায়
      এ নামটি সন্দীপ।

ঐতিহাসিক বেভারিজের
  মতে দেখা যায়,
সোম দেবতার নামে এ দ্বীপ
    সোমদ্বীপ নামটি পায়।

উর্বরতা আর প্রাচুর্য
  উভয়টির কারণে,
নামকরণ এর স্বর্ণদ্বীপ হয়
   বলেন নানা জনে।

কেউ কেউ বলেন বৃটিশগণ
    এ বঙ্গে আসার সময়,
দেখেন দ্বীপে বালুর স্তুপ আর
      দ্বীপটি বালুময়।

তাই তারা এর নাম দেন 'সেন্ড-হীপ'
       মানে বালুর স্তুপ,
পরে কিন্তু ওই নামটি পায়
      সন্দীপ নামে রূপ।

প্রায় তিন হাজার বছরেরও
       বেশি সময় ধরে,
লোক বসবাস করে আসছে
       এ দ্বীপের ভেতরে।

প্রাচীন কালে জাহাজ নির্মাণ
         কারখানায় এ স্থান,
বিশ্বে সেরা ছিল বলে
            ইতিহাস প্রমাণ।

লবণ এবং বস্ত্র শিল্পে এর
     ছিল বেশ খ্যাতি,
জাহাজ নিয়ে লবণ কেনতে
      আসতো নানা জাতি।
    
লবণ-শস্য আর জাহাজের
 কারবার দেখে সেরা,
এসে তখন উপনিবেশ
    গড়ে ইংরেজেরা।

সেকালে এ সন্দীপের রূপ
      কেড়ে নিতো মন,
তাই এখানে নানা দেশের
      লোকজন করতো ভ্রমণ।

তেরো শত পঁয়তাল্লিশে
     ইবনে বতুতাকে,
ইতিহাসে ভ্রমণ করতে
    দেখি সন্দীপটাকে।

এককালে মগ এবং আরকান
     এ দ্বীপ শাসন করে,
পরে তাদের দেলোয়ার খাঁন
       তাড়ায় যুদ্ধে লড়ে।

পঞ্চাশ বছর সন্দীপ শাসন
          করেন দেলোয়ার,
জমিদারি রীতি পরে
        চালায় মোগল সরকার।

ইংরেজগণও করেনি
       এ প্রথার পরিবর্তন,
বিলুপ্ত হয় এটি যখন
     ইংরেজদের হয় পতন।

এশিয়াতে এ জনপদ
    গর্ব করার মতো,
খ্যাতিভরা ইতিহাস এর
     আছে শত শত।

দ্বীপটির কবি মিননাথ আর
    কবি আবদুল হাকিম,
বাংলাভাষায় রাখেন তারা
      অবদান অসীম।
       
পূর্ববঙ্গের মাঝে প্রথম
   গ্র্যাজুয়েট হন যিনি,
বছির উদ্দীন নামে ছিলেন
   এ দ্বীপের লোক তিনি।

বিজ্ঞ আলেম ইমামুদ্দীন
     দ্বীনি সেবার কাজে,
এ এলাকার গর্বিত লোক
    ছিলেন বাংলার মাঝে।

কমিনিষ্টের মুজাফ্ফর যার
   নামটি রাজনীতিতে,
বঙ্গে খ্যাত ছিল তারও
     জন্ম এর মাটিতে।

ঊনিশ শত ছয়ষট্টিতে
    মুজিব ছয় দফার,
এ দ্বীপ থেকে করেছিলেন
     বজ্রকণ্ঠে প্রচার।

মধুবালা গীতিনাট্য,
     চক্রবাক নজরুলে,
লেখেছিলেন সন্দীপ এসে
     গাছের ছায়াতলে।

এ দ্বীপের লোক অনুকূলে
   পায় না পরিবেশ,
তবু তারা মেধার স্বাক্ষর
    রাখে দেশে বেশ।

এর বর্তমান জনসংখ্যা
     প্রায় চার লাখের মত,
জীবন রক্ষার যুদ্ধে তারা
      নিত্য থাকে রত।

দেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে
     বিচ্ছিন্ন হলেও,
শিক্ষা-দীক্ষায় তারা দেশে
      পেছনে নেই আদৌ।

জনসংখ্যার সাতচল্লিশ ভাগ
      শিক্ষিত আজ তাদের,
যা প্রতিকূল পরিবেশে
        অবশ্যই গৌরবের।

এ সন্দীপের শিক্ষক, ডাক্তার,
      ইঞ্জিনিয়ার কত,
দেশ-বিদেশে নানা পদে
      আছেন কর্মরত।


ক্ষুদ্র দ্বীপের লোক হয়েও

    তারা অবদানে,

অবশ্যই নিজ দেশ-জাতিতে 

   থাকে সেরা স্থানে।


তারা থাকে বীরের মত 

  দুর্যোগ মোকাবেলায়,

ভয়কে তারা জয় করে নেয়

    সাহসী চেতায়।


কিন্তু তাদের দুঃখ একটাই

     মূল ভূ-খণ্ডের সাথে

যোগাযোগের সময় থাকে

 কঠিন অবস্থাতে।


এ প্রযুক্তির যুগে তাদের
     যোগাযোগের ধরণ,
পুরোপুরি রয়ে গেছে
       আদি যুগের মতন।

তাজা তাজ প্রাণ চলে যায়
     এতে দুর্যোগ কালে,
তবুও কিন্তু কর্তৃপক্ষ
       থাকে বেখেয়ালে।

মা-বাবা আর ভাই বোন তখন
      হারায় অনেক লোকে,
খোদার আরশ কাঁপে তাদের
     আপনজনের শোকে।

এদের মধ্যে থাকে আরো
     সরকারী লোকজন,
করো কারো থাকে আবার
      খ্যাতি অসাধারণ।

দেশে ওসব লোকের অভাব
       মোচন হয় না কভু,
বসে বসে কর্তৃপক্ষ
         আঙ্গুল চোষেন তবু।

এদের মধ্যে নির্ভর করে
    যাদের পরিবার,
কি হয় সে সব পরিবারের
      বলার নেই দরকার।

যোগাযোগের এমন হালচাল
      হয় যদি এ কালে,
মনে হয় না দেশে দক্ষ
       সরকার আছে বলে।

প্রশাসনের কাছে এখন
       করি এ মিনতি,
দূর করুন এ দ্বীপের লোকদের
        যোগযোগ দুর্গতি।
                            
                         ( চলবে)

( বাবু নিখিল চন্দ্র দাশ এবং মাওলানা হারুন        সাহেবের অনুরোধে রচিত।)

.. 

No comments: