'এপ্রিলপুল' কি?
ইংরেজি সনের ৪র্থ মাসের নাম হচ্ছে 'এপ্রিল' (April) এবং পুল (Fool) শব্দের অর্থ হচ্ছে বোকা। অতএব, 'এপ্রিলপুল' মানে এপ্রিল মাসের বোকা। তাই, কারা এ এপ্রিল মাসের বোকা সেটি জানার জন্যে ইতিহাস পাঠ একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। যাদের এ ইতিহাস জানা নেই, তাদের জন্যে ইতিহাসটি সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরলাম।
এনসাইক্লোপিডিয়া ও ইতিহাস গ্রন্থের বরাতে
ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া সম্পাদিত ‘পহেলাএপ্রিল’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন,
স্পেনের অত্যাচারিত মানুষদের আহ্বানে সাড়া
দিয়ে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরি মুতাবেক ৭১১
খ্রি. স্পেনে প্রবেশ করে। মুসলিমগণই
ইউরোপের মানুষদের জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা
দেন। মুসলিম স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ওঅন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয গুলোতে
ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা
পড়তে আসত। ৭১১-১৪৯২ খ্রি. পর্যন্ত প্রায়
আটশ বছর স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল মুসলমানরা
শাসন করেছিল। এটি ছিল মুসলমানদের জন্য
স্বর্ণযুগ। শেষ দিকে তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে।মুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহ ভুলে গিয়ে দুনিয়ার মায়ায় মত্ত হয়ে নেতার নির্দেশ অমান্য করায় পারস্পরিক শত্রুতা বেড়ে গেল। তখনই তারা স্পেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ফলে খ্রিস্টানরা ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অঞ্চল মুসলিমদের থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৫২২ বছর আগে মুসলিম অধ্যুষিত
৮৯৮ হিজরি মোতাবেক ১৪৯৩ খ্রি. রাজা
ফার্দিনান্ড ও রানী ঈসাবেলার যৌথ উদ্যোগে
মুসলিমদের শেষ রাজধানী গ্রানাডা দখল
করতে সক্ষম হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য,
চিকিৎসা, রাজনীতি, স্থাপত্য, শিল্প ও অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি দেখে মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য
রাজা ফার্দিনান্ড এক ভয়ঙ্কর ফন্দি আঁটলো।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলো।
মুসলমানরা রাজা-রানীর কাছে আত্মসমর্পণ
করলেন। এমতাবস্থায় ফার্দিনান্ড ঘোষণা
করেছিল, যারা মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেবে
তাদের নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হবে। তার
ঘোষণায় চল্লিশ হাজার মুসলমান আত্মবিশ্বাসী
হয়ে গ্রানাডার বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নিলেও
তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। মসজিদের দরজাগুলো বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের মেঝেতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মুসলিমদের হত্যা করেছিল রাজা ফার্দিনান্ড। ঐতিহাসিক এক বর্ণনা মতে তিন দিন পর্যন্ত হত্যার উৎসব চলেছিল। মসজিদের বাহিরেও অসংখ্য মুসলিমকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমুদ্রের মধ্যে
জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই করে হত্যা করা হয়।
অনেককে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়।
অথচ মুসলমানরা এ রকম একটি অবস্থার জন্য
প্রস্তুত না থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিন খ্রিস্টানগুরুর আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবি পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। শুধু মুসলিমগণ নয়, ইয়াহুদীদের উপরও খ্রিস্টানগণ একই রূপ অত্যাচার করে।
এ সময়ে রাজা ফার্দিনান্ড উপহাস করে বলেছিল,
হায় মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা।
মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাসের মাধ্যমে বোকা
বানানোর সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে এপ্রিল ফুল পালন করা হয়। অবশেষে খ্রিস্টানরা
কর্ডোভার সেই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে
গীর্জায় পরিণত করেছে। মসজিদের ভেতরে দরজা ও জানালার ফাঁকে ফাঁকে মূর্তি স্থাপন করেছে। এভাবেই মুসলিম ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা হয়েছে। এ ঘটনা ছাড়া আরো দুটি ঘটনার কথা উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ থাকলেও বর্ণিত ঘটনাটিই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ বলে
ঐতিহাসিকরা মত প্রকাশ করেছেন। (দৈনিক
ইনকিলাব, ২৮/৩/২০১৫)
অতএব, মুসলিম দেশে মুসলমানদের এপ্রিলপুল পালন যুক্তিসঙ্গত নাকি লজ্জাকর তা ভেবে দেখুন।
No comments:
Post a Comment