বাংলার গ্রীষ্মে
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ইয়াকুবী
অন্তরীক্ষে উষ্মাগমে অরুণের দীপ্তিতে,
হিমারতির প্রখরতা নামে ধরনীতে।
দহনে তার পথ. ও প্রান্তর শুধু খাঁ খাঁ করে,
ঘর-দুয়ার আর মাঠ-ঘাট যেন অনলে যায় ভরে।
ছোট নদী, ডোবা, খাল আর বাপী আছে যতো,
কেঁদে কেঁদে মাগে যেন পানি অবিরত।
গাঁয়ে সূর্যের প্রখর তাপে বাতাসের আশায়
বসে বসে লোকজন সময় কাটায় গাছতলায়।
খরায় ভষ্ম করে ফেলে সোনালি ফসল,
নিঃস্ব হয়ে কৃষাণেরা ফেলে চোখের জল।
পাড়া-গাঁয়ে নামে আরো মহামারী রোগ,
ঘটে এতে মৃত্যু এবং নানারূপ দুর্ভোগ।
অনাবৃষ্টি দেখা দিলে পল্লীর মুসলমান
ফিরনি-পায়েস গরীবএবং মাসকিনদের বিলান।
কোরান খতম, তাহলিল, মাহফিল চলে নানা স্থানে,
যেন প্রভু সন্তুষ্ট হোন ধরায় বারি দানে।
মাঝে মধ্যে কালবোশেখি বীরত্বের ভাব দেখায়,
উন্মাদনার সাথে আরো প্রলয়ের নাচ চালায়।
গাছপালা ফুল, ফসল, শষ্য, কুটির আর সব বন,
শিকারে হয় পরিণত করলে সে নাচন।
জরা-জীর্ণ যত কিছু থাকে এ ধরায়,
তাড়িত হয় সবগুলো ওই নাচনের লীলায়।
তার প্রলয়ের নাচের শাড়ির রঙ কুচকুচে কালো,
দ্রুত ঢেকে ফেলে এটি দিনের উজ্জ্বল আলো।
আনন্দে সে বজ্রনাদে চালায় বিজলির খেলা,
যে খেলায় সে তাজা তাজা প্রাণ নিয়ে যায় মেলা।
বিদ্রোহী এক বীরের মত হয়ে আগুয়ান,
ধরায় প্রবীন বধ করে সে জাগায় নবীন প্রাণ।
এতে ধরায় নবীনেরা নব উদ্দীপনায়,
রঙতরঙ্গের প্লাবন এনে সারাটা দেশ রাঙায়।
নিশিকালে চলে গাঁয়ে গীতি সারী-জারী
আঙ্গিনাতে গল্প নিয়ে বসে পল্লিনারী।
জ্যোৎস্নারাতে পল্লিগাঁয়ে নৈশভোজের পরে,
লোকজন বসে গল্প করে উন্মুক্ত প্রান্তরে।
সমগ্র দেশ উৎসব মূখর থাকে নাচ-গান-মেলায়,
দোকানিদের হালখাতা আর মাঠে বলিখেলায়।
পল্লিগাঁয়ে ওড়ে ঘুড়ি নীলাকাশের পানে,
নানা রঙের ঘুড়িতে ব্যোম সাজে সর্বখানে।
সোনালু, জুঁই, কৃষ্ণচূড়া,বেলি, গন্ধরাজ,
আরো বহু ফুলে থাকে গ্রীষ্মকালের সাজ।
গাছে গাছে সুমিষ্ট ফল ঝুলে থরে থরে,
বৃক্ষশাখা মুখর রাখে পাখিরা গান করে।
ভরা থাকে আম, জাম, লিচু আনারস কাঠাল,
মধুফলে প্রাণটা শীতল করে গ্রীষ্মকাল।
রসনাতে সরসতা গ্রীষ্মে করে দান,
যদিও তার দহনে হয় ধরনীটা ম্লান।
.......